প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ও মিত্ররা দেশ ধ্বংস করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়নে জাতিকে বাধাগ্রস্ত করার অভিসন্ধি থেকে সাম্প্রতিক সব ধরনের সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কংগ্রেসম্যানের নামে বিএনপি প্রচারিত সাম্প্রতিক ভুয়া বিবৃতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশী শক্তির সহায়তায় তারা ক্ষমতা জবরদখল বা বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় এবং এলক্ষ্যে তারা এমনকি জনগণকেও ধোকা দিতে চায়।
তিনি বলেন, দেশে মিথ্যাচারিতায় পারদর্শী হয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করতে এখন তাদের ধোঁকাবাজি সীমানা পেরিয়ে গেছে। দল হিসেবে বিএনপি এ অপকর্ম করছে। কিন্তু তাদের এ ধোঁকাবাজি গোটা জাতির জন্য লজ্জ্বার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে তাঁর মন্ত্রণালয়সমূহ পরিদর্শন কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণকালে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি বিজয়ী দেশ। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানী বাহিনীকে পরাজিত করে এ জাতি এ মর্যাদা অর্জন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বিএনপি বাংলাদেশের এ অগ্রগতি সহ্য করতে পারছে না এবং এসব অর্জনকে নস্যাত করে দিতে চায়।
খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা হয়নি- একথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরং তার চাহিদা মতো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা তাকে দেয়া হয়েছে। বেগম জিয়া অফিসেই থাকতে চান। প্রতিদিন তার দলীয় নেতারা তার সঙ্গে দেখা করছেন এবং তারা এখান থেকেই আন্দোলন সম্পর্কে বিভিন্ন নির্দেশ ও নির্দেশনা পাচ্ছেন
‘যদি সরকার তাকে অবরুদ্ধ করে থাকে, তবে কিভাবে প্রতিদিন সেখানে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে, বেগম জিয়া তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাচ্ছেন এবং তার দলের নেতারা তার সঙ্গে বৈঠক করছেন’ একথা জানতে চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী আন্দোলনের নামে দেশ ধ্বংস করতে সংকল্পবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক ও মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব এম এ হান্নান বক্তৃতা করেন। এ সময় মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সকল সামাজিক সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে এদিয়ে থাকা এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার পূর্ণগতিতে এগিয়ে যাওয়ায় বিএনপি নেত্রী কষ্ট পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মের হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রোথিত করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের রয়েছে অনেক দায়িত্ব। এ মন্ত্রণালয়কে জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আগামী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা বেং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত গণকবর, সাক্ষ্য, দলিলপত্র এবং স্থানসমূহ সংরক্ষণের পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিসংযোগ করা ছাড়া বিএনপি’র আর কোন আন্দোলন নাই। এ দলের চেয়ারপার্সন ক্ষমতায় অথবা পার্লামেন্টে না থাকায় গভীর অনুতাপে ভুগছেন। এখন তিনি প্রতিহিংসার আগুনে সারাদেশকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার আন্দোলনের অর্থ হচ্ছে মানুষ পুড়িয়ে মারা, বাস-ট্রাকে অগ্নিসংযোগ এবং তারা একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এমনকি গর্ভবতি মহিলাও তাদের সহিংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। এমনকি এদেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব বিশ্বাস করে না। তারা এখনও পাকিস্তান প্রীতিতে বিশ্বাসী, যা বাঙালি জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, বিএনপি বেশ কয়েকবার ক্ষমতায় এসেছিল এবং প্রতিবারই তারা দেশকে পিছনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়তে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অচিরেই বিশ্বে মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে পরিণত হবে।
‘প্রত্যেকেই তার সৃজনশীলতাকে রক্ষা করার চেষ্টা করে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে এবং আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের জনগণ উন্নয়ন দেখতে পায়।
তিনি বলেন, দেশের জনগণ বিশ্বাস করে কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং সরকার জনগণের আকাংখা পূরণে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি এ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেতে চেষ্টা চালাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করেছে এবং পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল ৬০ দিনের মধ্যে প্রকাশের ব্যবস্থা করেছে। কাজেই শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবন থেকে একটি দিনও হারাবে না। তিনি বলেন, বিএনপি হরতাল, অবরোধের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনঃব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি দেশে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা ঘটেছে অপরাধীদের বিচার হয়েছে। দেশকে কলঙ্ক মুক্ত করতে আমাদের দেশেও এসব অপরাধীদের বিচার হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নতুন প্রজন্মকে এ চেতনা ধারণ করতে হবে যে, তারা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক। স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। তিনি বলেন, দেশপ্রেম এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে এসব সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, অন্যান্য দলের দেশপ্রেমের ঘাটতি আছে। এ কারণে তারা দীর্ঘদিন দেশ শাসন করেও এ বিরোধপূর্ণ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়নি।
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আর্তত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা তাদের জন্য আরো কিছু করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা তাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা বিএনপি এবং রাজাকারদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার দেশ-বিদেশে প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অবদানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।