রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সরকার ও বিরোধী দলসহ সবাইকে জাতীয় সংসদে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “জাতীয় সংসদ দেশের সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এ প্রেক্ষাপটে আমি সরকারি দল ও বিরোধী দল নির্বিশেষে সকলকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।”
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, “সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রেখে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বর্তমান দেশ পরিচালনা করছে। গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন সুদৃঢ়করণ এবং সামাজিক শান্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিক চর্চা ও অনুশীলন জাতির বিভিন্নমুখী সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম।”
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে আবদুল হামিদ এই আহ্বান জানান।
বিকাল ৪টার কিছু আগে প্রেসিডেন্ট প্লাজা নামে পরিচিত সংসদের উত্তর প্লাজা দিয়ে সংসদ ভবনে ঢোকেন রাষ্ট্রপতি। সংসদে ঢোকার সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি বাদক দল বিউগল বাজিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সম্ভাষণ জানান।
বিকাল সোয়া ৪টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এসময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
সোয়া এক ঘণ্টার বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি অর্থনীতি, বাণিজ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ, বৈদেশিক সম্পর্ক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের কর্মকাণ্ড ও সাফল্য তুলে ধরেন। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, “দেশের মাটি থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে বর্তমান সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিগত মহাজোট সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে। এর ফলে দেশে নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।”
মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে বলেও ভাষণে উল্লেখ করেন আবদুল হামিদ।
বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্দোলনের নামে কতিপয় রাজনৈতিক দলের জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, খুন-জখমসহ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মধ্যে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।”
আবদুল হামিদ বলেন, “বর্তমান সরকার একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শণ, সমস্যা নিরসণে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকা্ঙ্খাকে বাস্তবে রূপ দিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “অতীতের অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা কাটিয়ে উঠে ক্ষুধা-দারিদ্র ও শোষণ মুক্ত দেশ গড়তে মহাজোট সরকার গত মেয়াদে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।”
“দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে সরকার আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৪ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয় এবং বর্তমান সরকারের ওপর দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়।”
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, “দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গতি ত্বরানিত করতে সরকার আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করতে এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে, বাঙালি জাতিকে আবারও ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।”
সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমেই আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে পারবো।”
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে মন্তব্য করে আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জাতীয় চার নেতা হত্যার আপিল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথাও তুলে ধরেন।