জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ২০১ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত তালিকার কেউই নিয়মিত ছাত্র নন। সবার বয়স ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যে। তাঁদের অন্তত ৩৫ জন বিবাহিত।
এদিকে নতুন কমিটির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে পদবঞ্চিতদের একাংশ গতকাল বুধবার বিকেলে বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় সেখানে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে দুপুরে নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে কিছু নেতা নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে থাকা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে যান। তখন তাঁদের স্বাগত জানিয়ে নেতা-কর্মীরা নানা স্লোগান দেন।
রাত সাড়ে আটটার দিকে নতুন কমিটির নেতারা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করেন। এ সময় কার্যালয়ের বাইরে পদবঞ্চিতরা বিক্ষোভ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক ও বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার। রাত সাড়ে ১০টার দিকে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাজিব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ২০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাতে ১৫৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ১৫৩ জনের কেউই নিয়মিত ছাত্র নন। কমিটির বেশির ভাগ নেতাই বিভিন্ন পেশায় জড়িত। সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সহসাধারণ সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের অন্তত ৩৫ জন বিবাহিত। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অবিবাহিত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরাই কেবল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সদস্য হতে পারবেন-সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে এমন কথা বলা থাকলেও নতুন কমিটির একজনও নিয়মিত ছাত্র নন। এ কমিটির সভাপতি রাজিব আহসান ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন।
সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি এর আগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছাত্রদল থেকে দুই দফায় চার বছর বহিষ্কৃত ছিলেন।
নতুন কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মামুনুর রশিদ এসএসসি পাস করেছেন ১৯৯৪ সালে। সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার ১৯৯২ সালে ফেল করে পরের বছর এসএসসি পাস করেন।
কমিটির সবচেয়ে কম বয়স্ক নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষে। অর্থাৎ অর্ধযুগেরও আগে তাঁরা শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন।
নতুন কমিটির সহসভাপতি নিয়াজ মাখদুম মাসুম বিল্লাহ ২০০২ সালে বুয়েটের ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি হত্যা মামলার আসামি। প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম (হিমেল) অপর একটি হত্যা মামলার আসামি বলে জানা গেছে।
দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১২ জন সহসভাপতি থাকার কথা থাকলেও বতর্মান কমিটিতে সহসভাপতি করা হয়েছে ৩৩ জনকে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১৪ জন বিবাহিত।
গঠনতন্ত্রে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ দুটি। কিন্তু নতুন কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩৫ জন। এঁদের মধ্যে ১০ জন বিবাহিত।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পাঁচটি। এবার ২৮ জনকে এ পদ দেওয়া হয়েছে। এঁদের আটজন বিবাহিত। সাতজন সহসাংগঠনিক সম্পাদক থাকার কথা থাকলেও আছেন ২৮ জন। এঁদের তিনজন বিবাহিত।
এর আগে ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরাবরের মত নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি করা হয়নি।
এর আগে ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুই বছরের জন্য ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। সাত মাস পর ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়। কমিটির আকার দাঁড়ায় ২৯১ সদস্যে। অনেকে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কমিটিতে স্থান পেয়েছিলেন বলে তখন অভিযোগ উঠেছিল। ৫ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ‘নিষ্ক্রিয়তায়’ পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়া বিভিন্ন বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ কারণে ছাত্রদলকে পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদে বলা হয়, জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। অথচ এবার কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।
পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিনের পছন্দ অনুযায়ী নতুন কমিটি হয়েছে। দলীয় কর্মসূচিতে যাঁরা তুলনামূলকভাবে সক্রিয় ছিলেন, তাঁদের অনেকে বাদ পড়েছেন।
অবশ্য শহীদ উদ্দীন চৌধুরী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং অনেকের মতামত নিয়েই এ কমিটি করা হয়েছে। এখানে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়।