মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল এবং অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতদের ডেকে সরকারের অবস্থান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা সম্পর্কে সরকারের অবস্থান জানাতেই এই সাত দেশের কূটনীতিকদের ডেকে ব্রিফ করা হয়। এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে একই বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানানো হয়।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক জানান, ঢাকায় অবস্থিত সকল দেশের রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা সম্পর্কে সরকারের অবস্থান জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার ধারাবাহিকতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সাত দেশের কূটনীতিকদের সোমবার ব্রিফ করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সোমবার সাতদেশের কূটনীতিকদের কাছে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেন। আবুল হাসান মাহমুদ আলী ব্রিফিংয়ে বলেন, নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামিকে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেছে। জামায়াতে ইসলামি এবং হেফাজতে ইসলাম গত বছর নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতা কার্যক্রম চালিয়ে ব্যাপক হত্যা ও জানমালের ক্ষতি করেছে। অথচ বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এই দল দুটিকে সমর্থন দিয়ে সহিংস কর্মকাণ্ডের প্রশ্রয় দিচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে এবং গণতন্ত্রের যাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত। তাকে কেউ অবরুদ্ধ করে রাখেনি। অথচ খালেদা জিয়া নিজেকে অবরুদ্ধ বলে দেশে অরাজকতা এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।
ওই সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিএনপি নেতার সঙ্গে ভারতের বিজেপি নেতার ফোনালাপ কেলেঙ্কারি এবং মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের ভুয়া বিবৃতির প্রতি সাত কূটনীতিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিএনপির সিনিয়র নেতা তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার না করতে সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে মিডিয়াকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেননা তারেক রহমান বিভিন্ন মামলার আসামি। তিনি পলাতক অবস্থায় বিবৃতি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করছেন।
বিএনপি চেয়ারপরসনের উপদেষ্টা এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের উপর সন্ত্রাসী আক্রমণের কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের বলেন, এই ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ব্রিফিংয়ের পর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিন্দা প্রকাশ করে ঢাকায় অবস্থিত অস্ট্রেলীয় হাইকমিশন থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো হয়।
হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকুকের পক্ষে অস্ট্রেলীয় হাইকমিশন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, ‘সরকার এবং বড় রাজনৈতিক দলের (বিএনপি) নেতাদের সঙ্গে আজকে (সোমবার) এবং সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার আলাপ করেছি। বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্য কোনো যথাযথ কারণ খুঁজে পাইনি। অথচ রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে। যা খুবই নিন্দনীয়।’
বার্তায় আরো বলা হয়, ‘সবগুলো পক্ষকে অনুরোধ করবো সংলাপে বসে শান্তিপূর্ণভাবে বর্তমান সমস্যার সমাধান করতে। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতিবিদদের ইতিবাচক আলোচনা বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী হতে সহায়তা করবে।’
এর আগে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইডেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরাম বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানায়।