আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পা ধরে মাপ চাইতে হবে। মাপ না চাইলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না।
তিনি মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর কার্যালয় ও বাসভবনে বোমা হামলার প্রতিবাদে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সংগঠনটি।
সভায় শেখ সেলিম বলেন, ‘খালেদা জিয়া অবরোধের নাটক করছেন। আর বলছেন আলোচনা করতে হবে। কিসের আলোচনা? কোথায় আলোচনা? শেখ হাসিনার পা ধরে মাপ চান আর বলেন- আমি ওই সময় ভুল করেছিলাম। এখন একটু আমার সঙ্গে বসেন। তবেই আলোচনা হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে জামায়াত নির্বাচন করেনি তাই আপনিও (খালেদা) নির্বাচনে আসেননি। আর গতকাল সোমবার এক প্রেস কনফারেন্স করে বলছেন- দাবি মানতে হবে। আহারে! এ যেন মামু বাড়ির আবদার।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন না করে বিএনপি ভুল করেছে। আগামীতেও একই ভুল করলে দলটির অস্তিত্বই থাকবে না, মুসলিম লীগের পরিণতি হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি এদেশে মুসলিম লীগেরই নতুন সংস্করণ। কারণ তারা এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি।’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে শেখ সেলিম বলেন, ‘আপনার ছেলে বিদেশে বসে বলছে- জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও। দেশকে বিচ্ছিন্ন করে দাও। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- জনগণের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। এর পরিণতি ভালো হবে না।’
তিনি উপহাস করে বলেন, ‘নেতা দেখো গো বিএনপির নেতা দেখো! খালেদা অবরুদ্ধ সেখানে কোনো নেতার খবর নেই। জিয়ার জন্ম না মৃত্যু দিন ছিল গতকাল, সেখানেও কেউ যায়নি। কি বিপ্লবী দল, আর তাদের নেতারা। ওরে আমার বিপ্লবী নেতা রে!’
শেখ সেলিম বলেন, ‘ওদের কোনো সাহস নেই। ওরা বাসার সামনে দুইটা বোমা মারতে পারে। আরে সাহস থাকলে সামনে আসেন, সময় দেন। খালেদা জিয়া আপনিও সময় দিন- কবে, কোথায়, কখন আপনি মাঠে নামবেন, আমরাও তখন নামব। দেখা যাবে কার সঙ্গে জনগণ আছে।’
খালেদা জিয়াকে মানবতাবিরোধী অপরাধী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৪ তারিখ আপনি হঠাৎ করে গাট্টি-বস্তা নিয়ে অফিসে উঠে বলা শুরু করলেন- আপনাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য সারা দেশে আপনি অবরোধ ডাকলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। আপনি যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, এজন্য আপনার বিচার হওয়া উচিত।’
এ সময় শেখ সেলিম সারাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য খালেদাকে গ্রেপ্তার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
তিনি দেশীয় বুদ্ধিজীবী ও বিদেশি কূটনীতিকদের কড়া সমালোচনা করেন। বলেন, ‘কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি আছেন, যারা বলে- একটু আলোচনা করলেই তো হয়। বিদেশি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরো কয়েকটি দেশও আলোচনার কথা বলে। আমি স্পষ্ট বলতে চাই- বাংলাদেশের কোনো বিদেশি প্রভু নেই। এখানের রাজনীতি কি হবে, এদেশের মানুষ ঠিক করবে। ওই সব তত্ত্ব-ফত্ত্ব বিতরণ বাদ দেন।’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে সেলিম বলেন, ‘এক বছর আগে নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে আপনি প্রায় দুই হাজার মানুষ মেরেছেন। পুলিশ, আনসার সদস্য এমনকি সেনাবাহিনী সদস্যও হত্যা করেছেন। নির্বাচন ঠেকাতে পারেননি।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘শায়েখ আব্দুর রহমান, উলফা-তুলফা দিয়ে এই সরকারের কিছুই করা যাবে না। বাংলাদেশে একজন ছিল সিরাজ সিকদার। এখন কোথায় সেই সিরাজ সিকদারের দরাজ? তাদের একটা টিকিও খুঁজে পাওয়া যায় না।’
বিএনপির লোকেরাই খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানকে গুলি করেছে দাবি করে আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য আপনার লোকেরাই রিয়াজ রহমানকে গুলি করেছে। সব ধরা পড়ে গেছে। সময় মত সব কিছুই জানতে পারবেন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলী লীগের সভাপতি মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তৃতা করেন- যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।