চলমান হরতাল ও অবরোধে অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে চরম অচলবস্থা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এতে বিগত ১৬ দিনের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।
লাগাতার অবরোধের মধ্যেই বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি হোসেন খালেদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন। এ সময়ে ডিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদ, সহ-সভাপতি মোঃ শোয়েব চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
হোসেন খালেদ জানিয়েছেন, অর্থবছরের মোট জিডিপি ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। হরতাল-অবরোধে প্রতিদিন যে পরিমাণের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তাতে ১৬ দিনে জিডিপির ২ দশমিক ৭০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক এ ক্ষতি কোনো দিনও পোষাণো সম্ভব হবে না। প্রতিদিন খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হচ্ছে, বহিঃবিশ্বে আমাদের সুনাম সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে।
এ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোর আহ্বান জানান। একইসঙ্গে রাজনীতির কারণে যেনো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য সকলের সহায়তা কামনা করেন। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ব্যবসায়ীরা সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি অবহিত করেন।
হোসেন খালেদ বলেন, হরতাল-অবরোধে রাজধানী থেকে দেশের প্রতিটি জেলা শহর বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপই একমাত্র পন্থা। পৃথিবীর কোন দেশেই চাপ বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সমাধান অর্জন সম্ভব হয়নি। এজন্য রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে অবিলম্বে সংলাপ আয়োজনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে।
ডিসিসিআই এর হিসেবে দেখা যায়, গত ১৬ দিনের অবরোধে সর্বমোট আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ হজার ৪৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যার খাতওয়ারী পরিসংখ্যান নিচে দেওয়া হলো।
সিটিজেন কাউন্সিল গঠন: রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি হোসেন খালেদ দেশের সিনিয়র নাগরিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি “সিটিজেন কাউন্সিল” গঠন করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, এ কাউন্সিলের কোনো সদস্য রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত হবেন না। যারা সকল রাজনৈতিক দলকে সমানভাবে মূল্যায়ন করে গ্রহণযোগ্য সুপারিশ প্রণয়ন করবে যা প্রয়োজনে ভবিষ্যতে জাতীয় সংসদেও উপস্থাপন করা যেতে পারে।
সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা: হোসেন খালেদ বলেন, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা বজায় রাখার লক্ষ্যে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক দলগুলোকে পারস্পারিক সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক ইস্যুতে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে হবে। অবরোধ-হরতাল দেশ ও জনগণের ক্ষতি ছাড়া অন্য কোন কিছু দিতে পারেনা। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে সে দলকেই সকল অর্থনৈতিক ক্ষতির বোঝা বহন করতে হয়। তিনি বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার আওতায় সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নির্দিষ্ট স্থানে সভা, সমাবেশ করার অধিকার থাকায় বিশ্বাসী। অন্যদিকে রাজনৈতিক আন্দোলন কোন অবস্থাতেই সহিংস হওয়া উচিত নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রত্যাশা করি।
রফতানিমুখী শিল্পকে হরতালের আওতামুক্ত রাখা: ডিসিসিআইয়ের সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, রফতানিমুখী শিল্পকে হরতালের আওতামুক্ত রাখতে হবে। এজন্য রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক, কার্গো ইত্যাদি পরিবহনকে প্রশাসনিক সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করে পোর্টে পণ্য যাওয়া এবং আসার স্থানে নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। উভয় স্থানে প্রয়োজন অনুসারে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী মোতায়েন করার আহ্বান জানান তিনি।
সুদ মওকুফ ও ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ: হোসেন খালেদ বলেন, লাগাতার অবরোধের ফলে আর্থিক ক্ষতি মেটাতে ব্যাংক রেটে খাতভিত্তিক পুনঃঅর্থায়ন একান্ত আবশ্যক। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা বর্তমান অবস্থায় চরম আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে, তাই ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফের দাবি জানাচ্ছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিনই ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এ পরিস্থতিতে ঋণ শ্রেণীকরণের ক্ষেত্রে পুনঃতফসিলিকরণের সুযোগ প্রদানের আহবান জানাচ্ছি।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে: ডিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভাল নয়, তার উপর সরকার পিডিবির পক্ষ থেকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। যেখানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে, সেখানে বাংলাদেশে এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম পুনরায় বৃদ্ধি করা হলে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, দেশে জ্বালানি তেলের দামও কমে আসা উচিত, যা আমাদের কৃষি ও পরিবহন খাতে ইতিবাচক সুফল বয়ে আনবে।