অবরোধ-হরতালের নামে সারাদেশে সহিংসতা ও নাশকতা সহায়ক সংবাদ প্রচার বন্ধে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছে সরকার। বৈঠকে নাশকতা সহায়ক সংবাদ প্রচার না করে সরকারকে সহায়তা করবে বলে মত দিয়েছেন চ্যানেলগুলোর প্রধানরা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সারাদেশে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বিশেষ সভার একদিন পরই টেলিভিশন মালিকদের সঙ্গে এ বৈঠকে বসল সরকার। তবে এ বৈঠককে টেলিভিশন মালিকদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময়ের অংশ বলে দাবি করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
দেশের পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ দাবি করে এ বিষয়টি তুলে ধরতে বৈঠকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সহযোগিতা চাওয়া হয় সরকারের তরফ থেকে।
বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, “দেশে এখন আন্দোলনের নামে নাশকতা ও সন্ত্রাস চলছে। নাশকতা ও সন্ত্রাস জাতি বা রাজনীতিকে গাইড (পথ নির্দেশ) করতে পারে না। আদর্শ স্থাপন করতে পারে না। দেশেকে একটি অন্য খাতে প্রবাহিত করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ কাজগুলো করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক কিছু মানুষের অগোচরে ছিল। দেশের অবস্থা প্রকৃত অর্থে স্বাভাবিক, এ বিষয়ে মানুষ অবহিত নয়। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার গাড়ি ঢাকায় আসা-যাওয়া করছে, এ জিনিসগুলোর বিষয়ে মানুষ অবহিত নয়। দু’একটি বাস, ট্রাক পোড়ানোর বিষয় এমনভাবে তাদের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে যে তারা মনে করে সারাদেশেই একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ বিষয়গুলোর সঠিক তথ্যটা যাতে উপস্থাপিত হয়।”
সংবাদ প্রচারে কোন বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে আমু বলেন, “না, সুনির্দিষ্টভাবে কোন নির্দেশনা নয়, কোনরকম কিছু নেই। আলোচনার ভিত্তিতে যেটুকু সেটুকুই।”
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “সত্যটা তুলে ধরা হবে। দেশে যে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে সেটাই মিডিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।”
বৈঠক শেষে এ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (এটকো) সহ-সভাপতি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছি আমরা। সত্য তুলে ধরার জন্য আমরা যে প্রচেষ্টা নিয়েছি মন্ত্রীরা আমাদের সে বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন। আমাদের সামনে প্রশ্ন এসেছিল- এটা আন্দোলন না নাশকতা। আমরা একমত হয়েছি আন্দোলন একরকম, আর নাশকতা আরেক রকম।”
তিনি বলেন, “যেভাবে নাশকতা দেখতে পাচ্ছি, তাতে আমরা একমত এটা যাতে আমরা সেনসেশনালাইজ (অতিরঞ্জিত) না করি। এ বিষয়ে তাদের কিছু মন্তব্য ছিল, আমরাও একমত হয়েছি। আমরা নিজেরাও সেন্সর করি, যেটা আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর অবশ্যই সেটা আমরা করব না। আমরা যদি এ বিষয়গুলো (নাশকতা ও সহিংসতা) উৎসাহিত করি তবে ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।”
তিনি আরও বলেন, “কেবল অপারেটররা ভারতীয় চ্যানেলগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের করণীয় জানতে চেয়েছি আমরা। বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রীরা একমত হয়েছেন এ বিষয় ব্যবস্থা নেবেন তারা। শিগগিরই একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে এ বিষয়ে আামাদের একটি ফলাফল জানাবেন।”
একাত্তর এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, “আমরা একমত হয়েছি ইলেট্রনিক মিডিয়ার অপার শক্তি ব্যবহার করে নাশকতা দমনে সরকার ও রাষ্ট্রের পাশে থেকে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করবো। সন্ত্রাসীদের কোন দল নেই। এটা আন্দোলন নয়, এটা নাশকতা। নাশকতার বিরুদ্ধে দেশ-জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা কাজ করবো।”
বৈশাখী টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, “বৈঠকে সবাই একমত হয়েছি যে, আমরা সহিংসতা ও রাজনীতিকে যেন না মিলিয়ে ফেলি। সহিংসতা সহিংসতাই, রাজনীতি রাজনীতিই। সহিংসতা যদি রাজনীতি দখল করে ফেলে তবে রাজনীতি বিপজ্জনক জায়গায় পড়বে। আমরা বলেছি আমরা সুস্থ রাজনৈতিক ধারার পক্ষে, আমরা সহিংসতার বিরুদ্ধে। সন্ত্রাস ও রাজনীতি এক ধারায় চলতে পারে না।”
বৈঠকে কোন ডিকটেশন, কোন নির্দেশনা এমনকি কোন অনুরোধও করা হয়নি বলেও জানান মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল।
“পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা একমত হয়েছি, বর্তমান যে অবস্থা চলছে, বার্ন ইউনিটে যে চিৎকার, তা জাতির আর্তনাদ। এ আর্তনাদের পক্ষে আমরা, যারা এ আর্তনাদ সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে।” বলেন বুলবুল।
বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং জাসদ নেতা ও সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল উপস্থিত ছিলেন।