ছোট ছেলের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে তার গুলশান কার্যালয়ে গেলেও ভেতরে ঢুকতে না পেরে ফিরে যেতে হলো আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
শনিবার রাত সোয়া ৮টায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে রওনা হন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের উদ্দেশে। সাড়ে ৮টার কিছু সময় পর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর গুলশান ২ নম্বরের ৩৬ নম্বর সড়কে খালেদার কার্যালয়ের সামনে পৌঁছায়।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে পোঁছানের পর গাড়ি থেকে নেমে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আব্দুস সোজহান শিকদার, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলসহ কয়েকজন ফটকের সামনে যান। এসময় প্রধানমন্ত্রী গাড়ীতেই ছিলেন।
ফটকটি ভেতর থেকে বন্ধ দেখে শাকিল ফিরে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে আসেন। ইতোমধ্যে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী।
শিমুল বিশ্বাস ভেতর থেকে বলেন, “তোফায়েল ভাই, ম্যাডাম তো বেশ বিমর্ষ, তিনি অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। আমরা তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি। উনার ওখানে তো এখন আমরাও যেতে পারছি না। উনি তো দেখা করতে পারছেন না।”
ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে ফটকে ধাক্কা দিয়ে তা বন্ধ বলে নিশ্চিত হতে দেখা যায়।
এরপর শাকিল ফটকের সামনে এসে শিমুল বিশ্বাসকে ‘থ্যাংক ইউ’ বলে ফিরে যান। তখন প্রধানমন্ত্রী উঠে পড়েন তার গাড়িতে। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে খালেদার কার্যালয়ের সামনে থেকে ফিরে যায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের মূল ফটকের ভেতরে দুটি গাড়ি আড়াআড়ি রাখা ছিল। আগে থেকে রাখা ওই গাড়িগুলো প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার পর খবর শোনার পরও সরানো হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী গুলশানে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস কার্যালয়ের ভেতরে সাংবাদিকদের বলেন, “ছেলের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এপিএস আমাদের ফোন করেছিলেন। আমরা জানিয়েছি খালেদা জিয়া সুস্থ বোধ করলে আমরা তাকে জানাবো। ম্যাডামের সঙ্গে আলোচনা করে সময় সুযোগ বুঝে কখন দেখা করা সম্ভব তা জানিয়ে দেব।”
প্রধানমন্ত্রী শোকগ্রস্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় ধন্যবাদ জানান তিনি।
শিমুল বিশ্বাস যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ঠিক একই সময়ে গণভবন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় অভিমুখে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগেই প্রধানমন্ত্রী আসাকে কেন্দ্র করে সেখানে এসএসএফ, পিজিআর, পুলিশ, বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইউনিভার্সিটি মালায়া হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু হয়।
স্ত্রী সৈয়দ শামিলা রহমান সিঁথি, দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে কুয়ালালামপুরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকছিলেন কোকো।
২০০৯ সালের মে মাসে শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর ধানমণ্ডির সুধা সদনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমবেদনা জানান এবং দুই নেত্রীর মধ্যে কিছুক্ষণ কথাও হয়।
এরপর বেশ কয়েকবার একই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তারা কথা বলেননি।
২০১৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর শোক জানাতে বঙ্গভবনে দুই নেত্রী গিয়েছিলেন। অবশ্য সে সময় কথা হয়নি তাদের মধ্যে।
এছাড়া বিগত কয়েকবছরে একাধিকবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে গেলেও কথা বলেননি তারা।
জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন আরাফাত রহমান কোকো।
সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। অন্যদিকে মুদ্রা পাচার মামলায় বাংলাদেশের আদালতে ২০১১ সালে তার ৬ বছর কারাদণ্ড হয়; তবে বিএনপির দাবি, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।