নিরাপত্তার কথাও চিন্তা করিনি

‘ভেবেছি ছোট গেট দিয়ে যাই, কিন্তু সেটাও তালা মারা’

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নত্তর পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি- পিআইডি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে যাওয়ার পর ভেতরে ঢুকতে না পারা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “যখন মেইনগেট খুলেনি, তখন আমি ভেবেছি ছোট গেট দিয়ে যাই। তখন আমাকে জানানো হল, সেটাও তালা মারা। আমাকে এই অপমানও করা হয়েছে।”

নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার ছেলে মারা যাওয়ার পরে আমি দেখতে গেছি। আমি নিরাপত্তার কথাও চিন্তা করিনি।”

দশম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে কুমিল্লা-৯ আসনের সংসদ সদস্য তাজুল ইসলামের সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ সব কথা বলেন।

‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছেলে হারানোর বেদনা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে তিনি যেনো আর কোনো মায়ের বুক খালি না করেন।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “উনার (খালেদা জিয়া) ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যু, সেটা তিনি সহ্য করতে পারছেন না। শোক সইতে না পারার কারণে তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। অথচ যে মায়ের সন্তানকে তাজা পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, এর চাইতে গুনাহর, জঘন্য কাজ আর হতে পারে না।”

চলমান সহিংসতায় অন্যদের সন্তানহারা বেদনা উপলব্ধি করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা, “বেগম খালেদা জিয়া পুত্র হারা শোকে ভুগছেন। তারপরেও ইনজেকশন দিয়ে তাকে ঘুমিয়ে রাখা হয়েছে। তাকে এ ভাবে ঘুম পাড়ানোর প্রয়োজন হলে, যে মায়ের সন্তানদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, তাদের বিষয়টা উপলদ্ধি করতে পারবেন।”

সংসদ বক্তৃতায় এক সংসদ সদস্যের বিএনপিকে ‘বিরোধী দল’ বলে সম্বোধন করার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিছুক্ষণ আগে এক সংসদ সদস্য তাদের (বিএনপি) বিরোধী দল বলে আখ্যায়িত করেছে। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সচেতন হতে বলব। এখানে পার্লামেন্টে ডেমোক্রেসি রয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল তাদেরকেই বলে যারা পার্লোমেন্টে বিরোধী দলে বসে, তারাই বিরোধী দল। বর্তমানে বিএনপি কিন্তু সরকারেও নেই, বিরোধী দলেও নেই; একটা রাজনৈতিক দল জোট হিসেবে রয়েছে।”দীর্ঘদিন বিএনপি বিরোধী দলে থাকলেও বর্তমানে রাজনৈতিক দলটি সন্ত্রাসী দলে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপি জামায়াত জোটের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০ দলীয় ঐক্যজোট বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মানুষকে পুড়িয়ে মারা, ধ্বংসযজ্ঞ চালানো, কুরআন শরীফ পোড়ানো, চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে পোড়ানোসহ জঘন্য কর্মকাণ্ড আন্দোলনের নামে করে যাচ্ছে। অপকর্ম করে খালেদা, দোষ দেয় আমাদের। আমরা তো নির্বাচনের পর থেকে চমৎকার পরিবেশে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কোনো কথা বার্তা ছাড়াই গত ৫ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনের নামে তারা অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছে।”

এ সময় বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পাড়া মহল্লায় সবাইকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘পাহারা’ দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

“উচ্চ শিক্ষার প্রসারে দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে একটি করে সাধারণ-বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।” সরকারি দলের সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে সংসদকে জানান প্রধানমন্ত্রী।

৫২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার

ইন্টারনেট সেবা প্রসঙ্গে সরকারি দলের ইসরাফিল আলমের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সারাদেশে ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি প্রশাসনিক স্তরে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টারে ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়া হয়। যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ডিজিটাল সেন্টারগুলো চালু রাখা হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইন্টারনেট স্পীড বাড়ানোর জন্য আরো একটি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনসহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নামে একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে ইন্টারনেট স্পীড আরো অনেক বেড়ে যাবে। পর্যায়ক্রমে আমরা ৩-জি থেকে ৪-জি-তে চলে যাবো। ইন্টারনেট স্পীড এমনভাবে বাড়ানো হবে যাতে সকলে অবাধে ব্যবহার করতে পারে।”

নিহত ২৬, দগ্ধ ১৩৩

চট্টগ্রাম-৩ আসনের মাহফুজুর রহমানের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিএনপি-জামায়াত জোট সহিংসতা চালিয়ে জনগণকে জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।

“১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর মতো সহিংসতা ও নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে চোরাগুপ্তা হামলার মাধ্যমে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে।”

৫ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীদের পেট্রোল বোমা ও অগ্নিকাণ্ডে ১৩৩ জন মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে, নিহত হয়েছে ২৬ জন।

এছাড়া বিভিন্ন সহিংসতায় ৩৮২টি বাস-ট্রাকে আগুন, রেলে নাশকতামূলক ১৪টি ঘটনায় দুটি ট্রেন লাইনচ্যুত এবং তিনটি ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহত হয়েছে ও পুলিশের উপর ৮৫টি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।

‘দেশ উন্নয়নের পথে’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে একটি বছর দেশ শান্তিপূর্ণভাবে চলেছে। জনগণের সহযোগিতায় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। কৃষি, শিল্প, বিদ্যুত, জ্বালানিসহ সবখাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

তিনি বলেন, এসময়ে পদ্মা সেতুর কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সব কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২.৪ বিলিয়ন, মুদ্রাস্ফীতি ৬.১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। একবছরে ১২টি আন্তর্জাতিক ফোরামে নির্বাচিত হওয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।


জাতীয় বিভাগের আরো খবর...
সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে  হাইকোর্ট থেকে সমাধান আসা উচিত: প্রধানমন্ত্রী সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে হাইকোর্ট থেকে সমাধান আসা উচিত: প্রধানমন্ত্রী
আইএমএফ ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেল বাংলাদেশ আইএমএফ ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেল বাংলাদেশ
ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম
গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথচলা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথচলা
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলুন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলুন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
কোরবানির সুস্থ পশু চেনার উপায়, অসুস্থ গরু থেকে সাবধান কোরবানির সুস্থ পশু চেনার উপায়, অসুস্থ গরু থেকে সাবধান
এইডসের গুজবে বিব্রত মমতাজ এইডসের গুজবে বিব্রত মমতাজ
জুনেই ঢাকায় আসতে পারেন নরেন্দ্র মোদি জুনেই ঢাকায় আসতে পারেন নরেন্দ্র মোদি

‘ভেবেছি ছোট গেট দিয়ে যাই, কিন্তু সেটাও তালা মারা’
(সংবাদটি ভালো লাগলে কিংবা গুরুত্ত্বপূর্ণ মনে হলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।)
tweet