বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার অবরোধের মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারী থেকে ৭২ ঘণ্টার টানা হরতাল ডাকায় পিছিয়ে গেল এবারের এসএসসির প্রথম দিনের পরীক্ষা।
২ ফেব্রুয়ারি সোমবারের নির্ধারিত পরীক্ষা নেওয়া হবে ৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। ফলে পরীক্ষার্থীদের প্রথম পরীক্ষায় বসতে হবে ৪ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ বুধবার থেকে।
শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ রোববার সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “অমানবিক কর্মকাণ্ড চলছে, এই পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের হিংস্রতার মধ্যে ফেলে দিতে পারি না। তাদের নিরাপত্তা ও জীবনই আমাদের কাছে বড়। দেশে যা চলছে তা কারো কাছেই কাম্য ছিল না। শিক্ষার ক্ষতিটা তাৎক্ষণিক দেখা যায় না। সবার মধ্যেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যার জন্য আগামী ৩০ বছর সাফার করতে হবে।”
রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতায় উদ্বেগ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমরা খুবই মর্মহত যে, ঠিকমত পরীক্ষাটাও নিতে পারি না। খুবই উদ্বেগের মধ্যে আমরা দিন কাটাচ্ছি। অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ, অচিন্ত্যনীয় ও অমানবিক পরিবেশের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।”
দিনের পর দিন হরতালের নামে বোমাবাজি ও মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আবেদন-নিবেদন করে আর লাভ নেই। ছেলে-মেয়েদের আর উদ্বেগের মধ্যে রাখা যায় না।”
তবে হরতাল থাকায় প্রথম দিন সোমবারের পরীক্ষা পেছালেও শুধু অবরোধে পরীক্ষা পেছাবে না বলে নিশ্চিত করেন মন্ত্রী।
সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, সহজ বাংলা প্রথম পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল।
এদিন মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবীদ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনালে সকালে বাংলা-২ (১৯২১) সৃজনশীল এবং বিকালে বাংলা-২ (৮১২১) সৃজনশীল বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
এই পরীক্ষাগুলো আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।
প্রথম দিনের পরীক্ষা পিছিয়ে গেলেও ৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা হবে, ওই দিনই এবারের এসএসসির প্রথম পরীক্ষায় বসবেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্র, সহজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা হবে।
ওই দিন মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে হাদিস শরিফ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনালে সকালে ইংরেজি-২ (১৯২২) এবং বিকালে ইংরেজি-২ (৮১২২) বিষয়ের পরীক্ষা হবে।
এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবেন।
এর আগে হরতালে পরীক্ষা পেছানোর কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শুরু হচ্ছে, পরীক্ষা হচ্ছে, ফলাফলও দিচ্ছি। কিন্তু গত বছরও পরীক্ষা ঠিক সময়ে নিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছি।”
বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালে ২০১৩ সালে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়।
গত বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি পরীক্ষাও পিছিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনসহ ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।