বাঙ্গালির প্রানের মেলা বাংলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র পর্দা উঠছে আজ ১ ফেব্রুয়ারী। সাথে থাকছে ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন’র ২য় আসরের আয়োজন।
রবিবার বিকেলে গ্রন্থমেলা ও সাহিত্য সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। শুভেচ্ছা বক্তা হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। স্বাগত ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন জার্মানির সাহিত্যিক হান্স হার্ডার, ফরাসি লেখক ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, বেলজিয়ামের সাহিত্যিক ফাদার দ্যতিয়েন এবং ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, গবেষক ও ভাষাবিদ ড. পবিত্র সরকার।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রফেসর এমেরিটাস আনিসুজ্জামান।
গ্রন্থমেলা ও সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪’ প্রদান করা হবে।
‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫’ এ উপলক্ষ্যে শনিবার সকালে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত এক সাংবাদ সম্মেলনে মাসব্যাপী আনুষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘এবারের গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমি সম্মুখস্থ ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে।’
এবার গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে (৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১২৮টি ইউনিট) এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (২৫৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৩৭টি ইউনিট) মিলিয়ে মোট ৩৫১টি প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ৫৬৫টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এবারই প্রথমবারের মতো বাংলা একাডেমিসহ মোট ১১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে গ্রন্থমেলায় প্রতিটির জন্য ৪০০ বর্গফুটের প্যাভিলিয়ন প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে মেলার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ১০৬টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১টি করে ইউনিট, ৯৬টি প্রতিষ্ঠানকে ২ ইউনিট, ৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৩টি ইউনিট এবং ১টি প্রতিষ্ঠানকে ৪ ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বাংলা একাডেমির অভ্যন্তরীণ অংশে ৩২টি শিশু-কিশোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৪২টি ইউনিট, ২৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ৪৪টি ইউনিট, ১৯টি মিডিয়া ও আইটি প্রতিষ্ঠানকে ২০টি ইউনিট এবং ১৭টি অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২২টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এবার উন্মুক্ত জায়গাসহ ৭২টি লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে জায়গা করে দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যাঁরা বই প্রকাশ করেছেন তাঁদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে রাখা যাবে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে গত এক বছরের প্রয়াত দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ১৩জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের স্মরণে স্মৃতি-স্মারক স্থাপন করা হবে। ১৩জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হলেন- কবি আবুল হোসেন, দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম, ভাষাসংগ্রামী ও লেখক বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ইতিহাসবিদ সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ, চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম, ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন, জাতীয় স্মৃতিসৌধের স’পতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন, সাংবাদিক এবিএম মূসা, শিশুসাহিত্যিক এখ্লাসউদ্দিন আহ্মদ, মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদায়ী গানের রচয়িতা গোবিন্দ হালদার ও জিনবিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম।
নজরুল মঞ্চকে ঘিরে নির্মিত শিশুকর্নারে থাকবে শিশু-কিশোর বিষয়ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। শিশুদের বিনোদনের জন্য শিশুকর্নারে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রতিবারের মতো এবারেও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে নজরুল মঞ্চে। ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫’ এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে দুটি লেখককুঞ্জ থাকবে।
ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত স্বাধীনতা স্তম্ভ ও এর পাশ্ববর্তী জলাধারকে নান্দনিকভাবে গ্রন’মেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে যাতে স্বাধীনতার স্তম্ভের আলোক-বিচ্ছুরণে মেলা প্রাঙ্গণ আলোকিত হয়ে ওঠে।
‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫’ চলাকালে বাংলা একাডেমির ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন’র দ্বিতীয় দিন সকালের অধিবেশনে সৈয়দ শামসুল হক এবারের সাহিত্য সম্মেলনের ‘ধারণাপত্র’ উপস্থাপন করবেন। এছাড়া সৃষ্টিশীল সাহিত্যের তিনটি বিষয়ে তিন দিনব্যাপী দুটি করে অধিবেশনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রথম অধিবেশন এবং বিকেল আড়াইটা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দ্বিতীয় অধিবেশন।
প্রতিটি অধিবেশনই অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে। ২ ফেব্রুয়ারি কথাসাহিত্য বিষয়ক অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করবেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ৩ ফেব্রুয়ারি কবিতা বিষয়ক অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করবেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং ৪ ফেব্রুয়ারি নাটক বিষয়ক অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করবেন রামেন্দু মজুমদার।
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চিন, ভারত, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, ইকুয়েডরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ভাষার প্রায় পঞ্চাশজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাহিত্য-সমালোচক অংশগ্রহণ করবেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ফঁরাস ভট্টাচার্য, হান্স হার্ডার, ফাদার দ্যতিয়েন, মারিয়া বারেরা হেলেনা, তবিয়াস বিয়ানওনে, দাতু ড. আহমেদ কামাল আবদুল্লাহ, জার্মেইন ড্রুগেনব্রুট, সিন্ডিলি ব্রাউন, পিটার নাইবার্স, জামি ঝু, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, নবনীতা দেবসেন, উদয় নারায়ণ সিংহ, কবি উৎপলকুমার বসু, কবি সুবোধ সরকার প্রমুখ।
উল্লেখ্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের পাশাপাশি ত্রিপুরা, আসাম এবং বিহারের মৈথিলি ও ভোজপুরি ভাষার বেশ কয়েকজন সাহিত্যিকও এ সাহিত্য সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।
৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন’মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিস্মৃতপ্রায় বিশিষ্ট বাঙালি মনীষার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবার ৪ দিন শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হবে। গ্রন্থমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে।