বিএনপি জোট আন্দোলনে থাকলেও পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দলীয় নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার রাতে সংসদ ভবনে নবম তলার সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০ দলের কর্মসূচি নিয়ে ‘চরম প্রতিক্রিয়া’ না দেখাতেও দলীয় নেতাদের পরামর্শ দেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “নাশকতা ও মানুষ হত্যার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কপালে দুঃখ আছে। চাইলে তাকে অনেক কিছুই করা যায়। তবে এ মুহূর্তেই কিছু করতে চাই না। পরিস্থিতি আরও পর্যবেক্ষণ করা হবে। পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ছাড়া অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতা-সহিংসতা ও মানুষ হত্যা মোকাবিলায় জনগণকে সম্পৃক্ত করে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দলের সংসদ সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী চলা এ বৈঠক শুরু হয় রাত সাড়ে ৮টায়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বলেন, “সন্ত্রাস-নাশকতা দমনে সরকার সরকারের কাজ করবে, আর দলকে দলের কাজ করতে হবে। প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার পাড়া-মহল্লা, গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-মাঠে, মসজিদ-মন্দিরে বিএনপি-জামায়াতের দেশ ধ্বংসকারী নাশকতা-সহিংসতার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
বৈঠকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলী বলেন, ‘পরীক্ষার প্রথম দিন পিছিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি।’ মন্ত্রীর এমন বক্তব্য উপস্থিত নেতারা সমর্থন করেন।
তবে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি জোটের হরতালের কারণে প্রথম দিনের পরীক্ষা চলাকালে ছোট কোনো ঘটনা ঘটলেও তখন সরকারের বিরুদ্ধে একটি সমালোচনার সুযোগ সৃষ্টি হতো। দেশের জনগণও বলত একদিন পরীক্ষা পেছালে কী এমন ক্ষতি হতো?’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “এই পরীক্ষা সরকারের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। এটিকে সরকার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেও না। পরীক্ষা পরীক্ষার মতোই চলবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই পরীক্ষা একদিন পেছানো হয়েছে। তবে দলীয় এমপিদের এই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে এবং শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পরীক্ষা নিশ্চিত করতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের স্বাভাবিক দায়িত্বের অংশ হিসেবেই এই পরীক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করবে।”
নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, “এসএসসি পরীক্ষাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া ঠিক হবে না। যেভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, সে স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা শেষ করতে হবে।”
খালেদা জিয়াকে দেশ ও গণতন্ত্রের শত্রু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কয়েকদিন আগে ছেলে মারা গেলেও তার মধ্যে কোনো পুত্রশোক দেখা যায়নি। তিনি যেভাবে মানুষ হত্যা করছেন, জ্বালাও-পোড়াও করছেন, তা জনগণের মধ্যে আরও বেশি করে প্রচার করতে হবে।”
এসময় দল থেকে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত লিফলেট জনগণের মধ্যে বেশি করে বিলির নির্দেশও দেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বর্তমানে যা চলছে সেটি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। এটি সহিংসতা ও সন্ত্রাস। এটিকে কঠোর হস্তে মোকাবিলা করতে হবে।”
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার বক্তব্যে চলমান সহিংসতা মোকাবেলায় জনসম্পৃক্তা বৃদ্ধির প্রয়োজনে দুই সপ্তাহ সংসদ অধিবেশন মূলতবি করার প্রস্তাব করেন। প্রধানমন্ত্রীসহ সভায় উপস্থিত অন্যরা এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
তবে আগামী বুধবারের পর থেকে সংসদ অধিবেশন কয়েকদিনের জন্য মূলতবি করা হতে পারে বলে সূত্র দাবি করে।
বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম।