ড্র করলেও চলতো; কিন্তু আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েই বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের সেমি-ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ।
সোমবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১-০ গোলের এই জয়ে ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ হয়েছে মামুনুল-এমিলিরা।
৪১তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে একমাত্র গোলটি করেন হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস। দ্বিতীয়ার্ধে শ্রীলঙ্কার একটি পেনাল্টি বাংলাদেশ গোলরক্ষক সহিদুল ইসলাম সোহেল ঠেকিয়ে দেওয়ায় ম্যাচে ফিরতে পারেনি অতিথিরা।
চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গোল্ড কাপের সেমি-ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিল মালয়েশিয়া।
এ নিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখল বাংলাদেশ। গত বছর অক্টোবরে খেলা দুই প্রীতি ম্যাচে যশোরে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ড্র করলেও রাজশাহীতে ১-০ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ।
ম্যাচের শুরু থেকেই গতি কম থাকলেও ছোট ছোট পাসে আক্রমণের ধার বাড়াতে থাকে বাংলাদেশ। আক্রমণের সুফলও প্রথমার্ধে তুলে নেয় স্বাগতিকরা।
৪১তম মিনিটে সোহেল রানা, জাহিদ হাসান এমিলি ও হেমন্তের দারুণ বোঝাপড়ায় গোলটি আসে মাঝ মাঠ থেকে সোহেলের বাড়ানো লম্বা ক্রস এমিলি বুক দিয়ে নামিয়ে হেমন্তকে দেন। বক্সের বাইরে থেকে শেখ রাসেলের এই মিডফিল্ডার গতিময় শটে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকে পরাস্ত করেন।
হেমন্তের গোলের আগেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু একাদশ মিনিটে জাহিদ হোসেন সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। মাঝ মাঠ থেকে অধিনায়ক মামুনুল বল বানিয়ে দিয়েছিলেন জাহিদকে কিন্তু শেখ রাসেলের এই ফরোয়ার্ডের শট সোজা প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকের গ্লাভসে জমা হয়।
২১তম মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সে বেশ চাপ তৈরি করে বাংলাদেশ। কিন্তু জাহিদের ক্রসে বলের লাইনে থাকা এমিলি ও সোহেল-দুজনের কেউই দরকারি টোকাটা দিতে পারেননি। এর পরই জাহিদের শট শ্রীলঙ্কার গোল পোস্টের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।
৩২তম মিনিটে আরেকবার গোল বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। রায়হান হাসানের লম্বা থ্রো থেকে বক্সের জটলার মধ্যে শট নেন সোহেল; কিন্তু বল প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে শ্রীলঙ্কার রক্ষণভাগে প্রচণ্ড চাপ তৈরি করে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক সুজান পেরেইরার দৃঢ়তায় ব্যবধান বাড়িয়ে নিতে পারেনি স্বাগতিকরা। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ইয়াসিন খানের মাপা হেড দারুণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন অতিথি দলের গোলরক্ষক।
১-০ গোলে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণ করতে থাকে। তবে জাহিদের বাড়ানো বলে হেমন্তের নেয়া দুর্বল শট শ্রীলঙ্কা গোলরক্ষক আটকে দিলে দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিকদের পাওয়া প্রথম সুযোগটি নষ্ট হয়।
একটু পরই শ্রীলঙ্কার আক্রমণ রুখে দেন রাসেল মাহমুদ লিটনের বদলে এ ম্যাচে বাংলাদেশের গোল পোস্টের নিচে দাঁড়ানো সহিদুল ইসলাম সোহেল। বক্সের মধ্যে বিপজ্জনক জায়গায় অতিথি দলের ফরোয়ার্ড এস সানজেভ বল পাওয়ার আগ মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন তিনি।
দুই মিনিটের মধ্যে দারুণ দুটি আক্রমণ করলেও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। জামাল ভূইয়ার পাস থেকে পাওয়া বলে জাহিদ শট নিলেও তা লক্ষ্যে থাকেনি। ৬০তম মিনিটে সোহেলের বাড়ানো বলকে গোলে রূপ দিতে ব্যর্থ হন এমিলি।
৬৬তম মিনিটে বক্সের মধ্যে এইচ কে ইশানকে ফেলে দেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক সোহেল। পেনাল্টি পায় শ্রীলঙ্কা। তবে এ এন রোশানের পেনাল্টি রুখে দেয়ার পর ফিরতি বলে নেয়া শ্রীলঙ্কার এই মিডফিল্ডারের হেডও গ্লাভসবন্দী করেন তিনি।
৭৬তম মিনিটে জাহিদকে তুলে নেয় বাংলাদেশ কোচ ক্রুইফ। শেখ রাসেলের এই ফরোয়ার্ডের বদলে খেলতে নামেন মিডফিল্ডার মোনায়েম খান রাজু। তাতে আক্রমণের ধার কিছুটা কমলেও বলের নিয়ন্ত্রণ মামুনুল-জামালদের মুঠোয় ছিল।
৮৫তম মিনিটে আবার ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ডান দিকে দিয়ে আক্রমণে যাওয়া হেমন্তের শট শেষ মুহূর্তে প্রায় গোললাইন থেকে ফেরান থারিন্দু ইরাঙ্গা। এরপর হেমন্তের আরেকটি শটও কর্নারের বিনিময়ে ফেরান প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক।
শেষ পর্যন্ত ১-০ স্কোরলাইন ধরে রেখে লক্ষ্য পূরণের আনন্দে ভাসে বাংলাদেশ।সূত্র: বিডিনিউজ