হরতাল-অবরোধে নাশকতা বন্ধে বিশেষ আইন করে নাশকতাকারীদের বিশেষ ট্রাইবুন্যালে বিচারের দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। আজ সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সরকারি দলের সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথমে এ দাবি জানান।
এরপর একই বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন সরকার দলীয় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সরকারি দলের সদস্য আবদুর রহমান, আব্দুল মান্নান ও স্বতন্ত্র সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী।
আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, “কয়েকজন আইনজীবী আজ সুপ্রিম কোর্টে সমাবেশ করেছেন। সেখানে তারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার বাড়িতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য কেন উচ্চ আদালতে ‘সুয়োমটো রুল’ দিল না? এটা স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি এক ধরনের হুমকি দেয়া।
তিনি বলেন, “১৩ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের পতন হবে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদিন। তিনি সংবিধান অনুযায়ী একটি সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন না। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সরকার দলীয় এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, “সাধারণ আইনে বিশ্বের কোথাও জঙ্গি দমন করা যায়নি। তাই বিশেষ আইন করে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিচার করা হোক।”
চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ও আবদুর রহমান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচার দাবি করেন।
স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে একটা সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলো। এসএসসি পরীক্ষা শুরুর একদিন আগে জানানো হয়, সোমবারের পরীক্ষা শুক্রবার হবে। জ্বালাও-পোড়াও নাশকতা এখনো বন্ধ হয়নি। তাই ওই দিন আবার বোমাবাজি করবে কি না, নাশকতা হবে কি না, এর নিশ্চয়তা কি আছে? পরীক্ষার্থীরা যখন বাসে বা টেম্পুতে আসবে তখন যদি বোমা মারা হয়, এর নিরাপত্তা কে দেবে? তাই সংসদ থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইন করে নাশকতা বন্ধ করতে হবে।”
এসময় তিনি স্পিকারের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করেন।
পরে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সংসদীয় কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী একটি নোটিশের মাধ্যমে বিষয়টি আসলে সংসদ বিষয়টি বিবেচনা করবে।”
এছাড়াও রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে অবরোধ হরতালের নামে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের হত্যা, নাশকতা ও নৈরাজ্যে রুখে দিতে দেশবাসীকে তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সরকারি দল।
রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আজ পঞ্চম আধিবেশনের দশম দিনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজম্মেল হক, সরকারি দলের র আ উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, আবুল কালাম, ফরহাদ হোসেন ও জাতীয় পার্টির মামুনুর রশিদ আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “২০ দলীয় জোটের ‘বিষ’ ছড়ানোর কারণে ভবিষ্যত প্রজন্ম পরীক্ষা দিতে পারছে না।”
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “৫ জানুয়ারি নির্বাচন না হলে দেশে অসাংবিধানিক বা অনির্বাচিত ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হতো। বিএনপি-জামায়াত মনে করেছিল এই সরকারকে নির্বাচনের পরপরই ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে। কিন্তু তা না করতে পেরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত যুদ্ধাপরাধীদের দল ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।”
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “পরাজিত শক্তি বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। কিন্তু তারাই এখন অকার্যকর দলে পরিণত হয়েছে।”
মন্ত্রী আরও বলেন, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান আজ অন্ধকারাচ্ছন্ন, কুসংস্কারপূর্ণ দেশ। এটাই তাদের দুঃখ বাংলাদেশ কেন পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।”
তিনি বলেন, “তারা (বিএনপি জোট) জানে নির্বাচন হলে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই, তাই তারা ভিন্ন কায়দায় ক্ষমতায় আসতে চায়। এজন্যই তারা পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে।”
আইন-শৃংখলা রক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, “আইন-শৃংখলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমাল রক্ষা, বলা হলো-এজন্য প্রয়োজনে নাশকতাকারীদের নিবৃত্ত করতে গুলি চালানো হবে। তখন তারা বলছে, এটা নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘন। আজ সময় এসেছে। জনগণের জানমাল রক্ষায় সাংবিধানিক উপায়ে যা করা প্রয়োজন তাই করা উচিত।”
মন্ত্রী বিএনপি’র সাথে আলোচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “যারা এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তাদের সাথে আলোচনার প্রশ্নই উঠে না।”
মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারীদের প্রতি ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে বছরে একটি দিন ঘৃণা জানাতে পারে সেজন্য একটি ‘ঘৃণাস্তম্ভ’ নির্মাণ করা হবে বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ সুবিধা আরো বৃদ্ধি করা হবে বলে সংসদে উল্লেখ করেন তিনি।