কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেছেন অবরোধকারীরা।
এতে ঘটনাস্থলেই সাতজন অগ্নিদগ্ধ হয়ে সাত যাত্রী নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরো ২৩ জন যাত্রী।
মঙ্গলবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৩টার দিকে মিয়াবাজারের জগমোহনপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব ১৪-৪০৮০) একটি বাসে ওই স্থানে দুর্বৃত্তরা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে মুহূর্তের মধ্যে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বাসের কয়েক যাত্রী জানালা দিয়ে লাফিয়ে প্রাণে বাঁচাতে পারলেও ততক্ষণে দগ্ধ হয়ে মারা যান সাতজন। আরও দগ্ধ হয়েছেন অন্তত ২০ যাত্রী। তবে পুড়ে যাওয়ার কারণে মৃতরা পুরুষ না নারী তা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
বাসের যাত্রী ও হাসপাতাল সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তিরা হলেন—যশোরের সদর উপজেলার নুরুজ্জামান পপলু(৫০) ও তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে মাইশা(১৫), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার আবু তাহের ও আবু ইউসুফ, নরসিংদীর পলাশ উপজেলার আসমা বেগম ও তাঁর ছেলে শান্ত এবং ঢাকা কাপ্তানবাজারের ওয়াসিম।
নিহত সাতজনের লাশ সকালে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মর্গে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানান চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট নাজিম উদ্দিন।
নাজিম উদ্দিন আরও বলেন, “পেট্রলবোমার আগুনে বাসটির সব আসন পুড়ে গেছে। যাত্রীরা ঘুমে থাকায় হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে।”
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জনকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। দগ্ধ নয়জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়।পরে দগ্ধদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থান্তরিত করা হয়েছে। তারা হলেন- কক্সবাজারের মো. হানিফ (৩৫) ও রাশেদুল (২৫), মানিকগঞ্জের মো. ফারুক (২৩) ও মো. জিলক্বদ (২০), ফরিদপুরের মো. আরিফ (২২), নারায়ণগঞ্জের মো. শফিকুল (১৮)।
নিহত নুরুজ্জামানের স্ত্রী মাহফুজা বেগম মিতা(৩৭) এ ঘটনায় আহত হয়েছেন। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন মাহফুজা বলেন, “বাসের বেশির ভাগ যাত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ আগুন দেখে চিৎকার করে বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ি।”
মাহফুজা জানান, “তাঁরা চট্টগ্রাম থেকে ওই বাসে ওঠেন। তাঁর স্বামী ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। তারা যশোরের বাসিন্দা।”
নিহত আসমা বেগমের ছেলে মুন্না জানান, “কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে তাঁরা বাসে ওঠেন। নেমে যাওয়ার কথা ছিল কাঁচপুরে। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে। এ ঘটনায় তাঁর ভাই শান্তও মারা গেছে।”
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীসহ মহাসড়ক পুলিশের কর্মকর্তারা। তাঁরা হতাহতের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চক্রবর্তী বলেন, দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
বিএনপি জোটের লাগাতার অবরোধের ২৯তম দিন আজ। এ ছাড়া রোববার থেকে চলছে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল, যা আবার বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করা হয়েছে।
লাগাতার এই অবরোধে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৫২ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হছেন ১২০০ অধিক মানুষ। আগুন দেওয়া হয়েছে পাঁচ শতাধিক যানবাহনে। আরও ৪০০টি অধিক যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে।
পেট্রলবোমায় সন্তানসহ জাসদ নেতার মৃত্যুতে তথ্যমন্ত্রীর শোক
দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে যশোর জেলা জাসদের নেতা নুরুজ্জামান পপলু এবং স্কুলপড়ুয়া মেয়ে মাইশার মৃত্যুতে তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু গভীর শোক ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি অবিলম্বে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। আজ তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।