দিন চারেক আগে স্বপরিবারে কিছুটা প্রশান্তির আশায় বেড়াতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার। স্বপরিবার বলতে স্ত্রী মাহফুজা বেগম মিতা, ১৫ বছরের একমাত্র মেয়ে মাইশা ও তিনি নিজে ৫০ বছর বয়সী নূরুজ্জামান পপলু।
কিন্তু জানতেন না, এই সমুদ্রের এ পাড়ের বিশালতাকে পেছনে ফেলে চলে যাবেন আরও বিশাল অন্য কোনও না ফেরার পাড়ে।
জানতেন না, মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়ে যখন ফিরবেন নিজ বাড়ি যশোর, তখন ওঁত পেতে থাকা হায়েনাদের আন্দোলনের নামে নৃশংসতা, বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা ও চরম মানবতাবিরোধী এক অপকর্মের শিকার হবেন তিনি।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের বাসে গতকাল মাঝরাতে যে পেট্রোলবোমায় ঘুমন্ত মানুষগুলোকে ঝলসে দিল ওই নরপশুরা, সে ঘটনায় নিহত ৭জনের মধ্যে ২জন হলেন বাবা নূরুজ্জামান পপলু ও তার আদরের মেয়ে মাইশা।
যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা দুই সন্তানের (এক ছেলে ও এক মেয়ে) জনক নূরুজ্জামান পপলু পেশায় ছিলেন একজন ঠিকাদার। শহরের অতিপরিচিত মুখ পপলু। তার প্রাণোচ্ছল মেয়ে মাইশা পড়ত যশোর পুলিশ লাইন হাইস্কুলের নবম শ্রেণীতে।
পপলুর বাবা একজন জনতা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং মা যশোর মাহমুদুর রহমান স্কুলের প্রাক্তন প্রধানশিক্ষিকা, যারা এখনও জানেন না তাদের সন্তান ও নাতনিকে বলী হতে হয়েছে এই অপরাজনীতির।
নূরুজ্জামান পপলু ছোট ভাই যশোর শহর আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামরুজ্জামান ডাব্লু জানান, “প্রাথমিক খবর জানার পর আমার বড়ভাই পাট গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক আসাদুজ্জামান ও এক ভগ্নিপতি ঢাকা থেকে ভোরে কুমিল্লা রওনা হন। তারা কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে কিছু সময় আগে লাশ দুটি শনাক্ত করেছেন।”
তিনি আরও জানান, “ভাবি মাহফুজা বেগম মিতার হাত, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়ে গেছে। তবে তিনি আশঙ্কা মুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।”
এ ঘটনায় নিহত বাকি ৫ জনের পরিচয় এখন নিশ্চিত হওয়া যায়নি।