আট বছরের পুলিশের চাকুরিতে দুই মাসও হয়নি ডিএমপিতে এসেছেন, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাবার কথা ছিল কনস্টেবল শামিমের।
বাবা-মা, ভাই-বোন ও স্বজনেরা তার ফেরার অপেক্ষায়। তারা মেনে নিতে পারছে ঢাকা থেকে শামিম আসছে না, আসছে তার মরদেহ। ৭০ বছরের বৃদ্ধ বাবা জানে না কিভাবে সন্তানের লাশের এই ভার বইবেন।
বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় কনস্টেবল শামিম মিয়ার নামাজে জানাজা। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জানাজা শেষে কনস্টেবল শামিমের কফিনে পুস্পস্তবক দেন ডিএমপি কমিশনার।
চার ভাই, দুই বোনের পরিবারে শামিমই ছিল একমাত্র অবলম্বন। শামিম কে হারিয়ে টার পরিবার এখন দিশেহারা। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আজ শামিমের জানাজা শেষে তার এইচএসসি পাস করা ছোট ভাইয়ের চাকুরির ব্যাপারে আশস্ত করেছেন।
শামিমের সহকর্মীরা অশ্রুসজল নয়নে রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে শামিমকে যখন শেষ বিদায় জানালেন, ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা ৭ টার কিছু বেশি হবে।
শামিমের জানাজা শেষে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। শামিম মিয়ার মৃত্যুতে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “অবরোধ হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারা, নাশকতার যে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে তা থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছে না। কনস্টেবল শামিম তার জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশের ও জাতির জন্য। পুলিশ বাহিনী তাদের এই শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে সামনে এগিয়ে যাবে।”
নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারদৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধান বলেন, “এর সাথে যারাই জড়িত, কোনভাবেই তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।”
দেশের মানুষের নিরাপত্তা বিধানের জন্য যা যা করণীয় পুলিশ বাহিনী তা করতে প্রস্তুত বলে জানান আছাদুজ্জামান মিয়া।
এসময় নাশকতা ও নৃশংসতা বন্ধে সবার সহযোগিতাও চান তিনি। এছাড়াও ১৭ জানুয়ারী পুলিশ বাসে হামলার ঘটনায় যে মামলা হয়েছে তার ‘অনেকদুর’ আগ্রগতি হয়েছে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।
বৃহস্পতিবার বেলা ১০টার দিকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ১৯ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে যাওয়া কনস্টেবল শামিম মিয়া।
গত ১৭ জানুয়ারি দায়িত্ব শেষ করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে এ ফেরার সময় রাত ৮টার দিকে মৎসভবনের সামনে তাদের বাসটিতে পেট্রোলবোমা ছোড়ে গুপ্তঘাতক দুর্বৃত্তরা। এতে করে কনস্টেবল শামিম দগ্ধ হন এবং মাথায় আঘাত পান।
তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে স্কয়ার হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়।
শামিমের মৃত্যুর খবর শুনে আজ দুপুর ২টার দিকে মরদেহ দেখতে স্কয়ার হাসপাতালে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগেও ১৮ জানুয়ারি স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অগ্নিদগ্ধ শামিমকে দেখতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।