বিএনপি-জামাতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল ও অবরোধের নামে ‘দেশ বিরোধী চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, পেট্রোল বোমা, চোরাগুপ্তা বোমা হামলা, জঙ্গি নাশকতা, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারাদেশে মানববন্ধন করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধান ১৪ দলীয় জোট।
রবিবার বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে একযোগে পালিত এই মানববন্ধন থেকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার দায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করানোর দাবি তোলা হয়।
মানববন্ধনে বিএনপি ও তার জোটের সঙ্গে সংলাপ-সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে ১৪ দলের নেতারা বলেন, দানবের সাথে মানবের কোনও সংলাপ হতে পারে না। সংলাপ হবে ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে এবং দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ হবে।
রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ১৩টি স্পটে পালিত এই মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে খালেদা জিয়াকে পরাস্ত করেই মাঠ ছাড়ার ঘোষণা দেন ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনসহ দু’একটি স্পট ছাড়া প্রায় সবখানেই আয়োজক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবস্থান করে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।
ফেস্টুন, প্লাকার্ড, রং-বেরঙের ব্যানার, জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী সড়কের ১৬ কিলোমিটার রাস্তায় হাজার হাজার নেতা-কর্মী রবিবার বিকাল ৩টা বাজার আগ থেকেই রাস্তায় সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কোথাও রাস্তার এক পার্শ্বে আবার কোথাও উভয় পার্শ্বে অবস্থান নেন তারা। কোথাও কোথাও অবস্থানের পাশাপাশি রাস্তায় নেমে অবরোধ-হরতাল বিরোধী মিছিল স্লোগান দেওয়া হয়। স্লোগান থেকে খালেদা জিয়াকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী নেত্রী আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তার গ্রেফতার দাবি করা হয়।
এছাড়াও ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ স্লোগানে পুরো মানববনরাই ছিল মুখরিত।
১৪ দলীয় জোটের বাইরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠন ও পেশাজীবী নেতারা মানববন্ধনে যোগ দেন। রবিবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা ৭২ ঘণ্টার হরতাল সত্ত্বেও মানববন্ধনের রুট সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোয় তীব্র যানজট দেখা যায়।
বেশি লোক সমাগম হয় গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে। এখানে ১৪ দলের বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা অবস্থান নেন। রাসেল স্কয়ার, সোনারগাঁও হোটেল মোড় ও প্রেসক্লাবের সামনেও বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী মানববন্ধনে অংশ নেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলমের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী হাইকোর্টের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন পালন করেন।
বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে মানববন্ধন চলাচালে নগর ১৪ দলের সমন্বয়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
এতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম খালেদা জিয়াকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের নেত্রী আখ্যা দিয়ে বলেন, “দানবের নেত্রী খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় বন্দী থেকে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। জনগনকে সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়ার সন্ত্রাস ও মানুষ হত্যার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছি। তাকে পরাস্ত করেই মাঠ ছাড়ব। জনগণের প্রতিটি ফোঁটা রক্তের হিসাব খালেদা জিয়ার কাছ থেকে নেওয়া হবে।”
বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নাকচ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বলেন, “ওদের সাথে কোনও সংলাপ হবে না। ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপ হবে। তারপর শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসনকে তুফানি ও জল্লাদি বেগম আখ্যায়িত করে বলেন, “জনগণের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে।”
জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সংলাপের আহবানকারী বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে বলেন, “তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংলাপের কথা বলছেন। আমাদের কথা স্পষ্ট, দানবের সঙ্গে কখনও মানবের সংলাপ হতে পারে না। সংলাপ চাইতে হলে আগে তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। তার আগে কোনও কথাবার্তা নেই্।”
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খালেদা জিয়ার নাম রাজনীতির খাতা থেকে কেটে গেছে। এখন আবার রাজনীতির খাতায় নাম লেখানোর জন্য অবরোধ-হরতালের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু এতে জনগণের সাড়া না পেয়ে পেট্রোল মেরে মানুষ হত্যায় লিপ্ত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশকে ধ্বংসলীলায় পরিণত করতে চান। এর দায় বেগম খালেদা জিয়া এড়াতে পারবেন না। আর এজন্য তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।”
রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, “খালেদা জিয়া অনবরত মানুষ খুন করে যাচ্ছে। এভাবে সরকার পরিবর্তন করা যায়না। ক্ষমতায়ও যাওয়া যায়না। ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন সেই সুযোগটিও বিএনপি ইচ্ছা হারিয়েছে।”
মানবন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে নগর ১৪ দলের সমন্বয়ক ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের জন্য খালেদা জিয়া বিপদ জনক। তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে বলেও জানান তিনি।”
রাজধানী ছাড়াও দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একই সময় ১৪ দল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
কোন নেতা কোথায়
বিকেল ৩ টা থেকে ৪টা এই ঘণ্টাব্যাপী ১৪ দলের দেশব্যাপী মানব বন্ধনে রাজধানীতে গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ীর ১৬ কিলোমিটার রাস্তায় কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি কর্মী ও জনসাধারনের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করে।
গাবতলী থেকে টেকনিক্যাল হয়ে শ্যামলী পর্যন্ত রাস্তায় আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শ্রী সতীশ চন্দ্র রায় ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামের নেতৃত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ১৪ দলের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কামরূল হাসান, শরীফ শামসির প্রমুখ।
শ্যামলী থেকে আসাদ গেট হয়ে ২৭নং রোড পর্যন্ত মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মানববন্ধনে অংশ নেয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে মানববন্ধনে অংশ নেন ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি, এ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপি প্রমুখ।
বসুন্ধরা মার্কেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এলাকায় অবস্থান নেন তেজগাঁও এলাকার বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারসহ ক্যান্টনমেন্ট থানা আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নগর ১৪ দলের নেতারা।
সোনারগাঁও হোটেল মোড় থেক মৎস্য ভবন পর্যন্ত এলাকায় অবস্থান নেন যুবলীগ উত্তর ও ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী। হাইকোর্টের সামনে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আজম, ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া, সুজিত রায় নন্দী, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, সাব্বাহ আলী খান কলিন্স প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু স্কয়ার (গুলিস্তান সিনেমা মোড়) থেকে পার্কের মধ্য দিয়ে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত এলাকায় অবস্থান নেন মহানগর আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এমপি, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-হানিফ এমপি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বীরবিক্রম এমপি প্রমুখ।
ইত্তেফাক মোড় থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এলাকায় অবস্থান আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আখতারুজ্জামান, ওয়ার্কার্স পার্টির বিমল বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ওয়ার্কার্স পার্টির আকসীর এম চৌধুরী, আলী শিকদারসহ খিলগাঁও, সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নগর ১৪ দলের নেতারা।