বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৩০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি

ছবি- সংগ্রহিতবিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের (প্রায় দুই হাজার ৩৪০ কোটি টাকা) ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা ও মায়েদের সুনির্দিষ্ট সেবা দিতে এবং স্থানীয় পর্যায়ে কমন ইমপ্লিমেনটেশন প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।

এ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় পাঁচ লাখ দরিদ্র গর্ভবতী মা এবং শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী সন্তানের মা সরাসরি অর্থ সহায়তার আওতায় আসবেন। ‘ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে এ সহায়তা দেওয়া হবে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সোমবার এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাট স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি স্বাক্ষর শেষে মেজবাহ উদ্দিন জানান, “স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে মোট ব্যয় হবে দুই হাজার ৩৭৭ কোটি ৮০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার বাইরে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৩৭ কোটি ৮০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।”

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্যাকেজ কার্যকর ও সমৃদ্ধ সমন্বিত উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবাকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস করা এবং শিশু ও নারীদের পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ সামাজিক কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে অধিকাংশ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হওয়ায় নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাদি প্রকৃত দরিদ্রদের মাঝে পৌঁছাচ্ছে না। সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য উপকারভোগী শনাক্তকরণ, তালিকাভুক্তিকরণ, অর্থ প্রদান এবং অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণ ইত্যাদি কার্যক্রমের জন্য কমন ইমপ্লিমেনটেশন প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা গেলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা দূর হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। ওই প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।

দেশের সাত জেলার ৪২ উপজেলার ৪৪৩ ইউনিয়নের ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন পরিবারের প্রায় পাঁচ লাখ দরিদ্র গর্ভবতী মা এবং শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী সন্তানদের মায়েদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হবে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের গর্ভকালীন চারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০ টাকা হারে নগদ ৮০০ টাকা প্রদান করা, শূন্য থেকে ৪২ মাস বয়সী শিশুদের প্রতি মাসে গ্রোথ পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে ৫০০ টাকা হারে অর্থ প্রদান করা, ২৫ থেকে ৬০ মাস বয়সী শিশুদের প্রতি তিন মাস অন্তর গ্রোথ পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবার এক হাজার টাকা করে নগদ অর্থ প্রদান করা, অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য প্রতি মাসে শিশুপুষ্টি ও উন্নত শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মশালায় অংশগ্রহণ-সাপেক্ষে প্রতিবার ৫০০ টাকা হারে নগদ অর্থ প্রদান করা।

কর্মসূচি বাস্তবায়নের উপজেলাগুলো হল- গাইবান্দা জেলার ফুলছরি, গাইবান্দা সদর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি, সাদুল্লাপুর, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা; কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামরী, চর রাজিবপুর, চিলমারী, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, রৌমারী ও উলিপুর উপজেলা; লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্দা উপজেলা; নীলফামারী জেলার জলঢাকা; জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, জামালপুর সদর, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ ও সরিষাবাড়ী; ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা, ধোবাউরা, ফুলবাড়ীয়া, গফরগাঁও, গৌরীপুর, হালুয়াঘাট, ইশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ সদর, মুক্তাগাছা, নান্দাইল, ফুলপুর ও ত্রিশাল; শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, নকলা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর সদর ও শ্রীবর্দী উপজেলা।

প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতা বিষয়ে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রণীত ২০১০ সালের দারিদ্র্যম্যাপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের দু’টি দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল হচ্ছে দেশের উত্তর-মধ্যম অঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল। এ দুই অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশ অথবা এরও বেশী। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ‘নিউট্রিশন ফোকাসড সোসাল ইনভেসমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ কারণে দেশের উত্তর-মধ্যম অঞ্চলের নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

যে সব জেলায় দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশের ওপরে এবং অপুষ্টির হার অত্যন্ত বেশী, এ রকম পাঁচটি জেলার ৪০ উপজেলার ৪২০ ইউনিয়ন প্রকল্প এলাকা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ছাড়া পাইলট প্রকল্পের আওতায় লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্দা এবং নিলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার ২৩ ইউনিয়ন প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে। মোট সাত জেলার ৪২ উপজেলার ৪৪৩ ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।


নিউজ বিভাগের আরো খবর...
সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে  হাইকোর্ট থেকে সমাধান আসা উচিত: প্রধানমন্ত্রী সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে হাইকোর্ট থেকে সমাধান আসা উচিত: প্রধানমন্ত্রী
আইএমএফ ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেল বাংলাদেশ আইএমএফ ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেল বাংলাদেশ
ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম
গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথচলা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথচলা
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলুন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলুন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
কোরবানির সুস্থ পশু চেনার উপায়, অসুস্থ গরু থেকে সাবধান কোরবানির সুস্থ পশু চেনার উপায়, অসুস্থ গরু থেকে সাবধান
এইডসের গুজবে বিব্রত মমতাজ এইডসের গুজবে বিব্রত মমতাজ
জুনেই ঢাকায় আসতে পারেন নরেন্দ্র মোদি জুনেই ঢাকায় আসতে পারেন নরেন্দ্র মোদি

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৩০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি
(সংবাদটি ভালো লাগলে কিংবা গুরুত্ত্বপূর্ণ মনে হলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।)
tweet