বিএনপি-জামায়াতকে ‘জল্লাদ’ উল্লেখ করে তাদের সংবাদ প্রচার বন্ধ করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিউটে দগ্ধদের দেখতে গিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন। এসময় সংলাপের প্রসঙ্গটিও নাকচ করে দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা জল্লাদদের নিউজ কাভারেজ দেওয়া বন্ধ করুন, দেখবেন তারা সহিংসতা কমিয়ে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “জামায়াত-বিএনপি জঙ্গি দল। আপনারা কেন তাদের নিউজ প্রচার করেন। তাদের নিউজ প্রচার না করলে কী টেলিভিশন চলবে না।”
এসময় বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমায় দগ্ধ প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকার অর্থ সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অবরোধের আগুনে পুড়ে হতাহত ৬৩ জনের পরিবারকে এ সহায়তা দেন তিনি। তাদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, “অবরোধ সমর্থকদের আগুনে দগ্ধ হয়ে বর্তমানে ৫৩ জন সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর চিকিৎসা শেষে ফিরে গেছেন ৬৩ জন।”
গত ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সারাদেশে লাগাতার অবরোধ চলাকালে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোল বোমায় পুড়ে অর্ধ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েকশত মানুষ।
এর কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানুষকে বাঁচার সুযোগ না দিয়ে হত্যা করা-এটা কোনো রাজনীতি না, এটা একেবারে জঙ্গিবাদী কাজ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। চোরাগোপ্তা হামলা রাজনীতি না, এটা সন্ত্রাস।”
আন্দোলনের নামে এভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা বন্ধ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“এভাবে মানুষ হত্যা সহ্য করা হবে না। খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে।”
এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে জঙ্গিবাদের যেভাবে বিচার হয় সেভাবে বিচার করবো। যারা হুকুমদাতা, যারা অর্থ যোগান দেয়, বোমা বানায়, বোমা মারে তারা সবাই দোষী। সবাইকে ধরতে হবে। তাদেরকেও একই শাস্তি পেতে হবে।”
বোমাবাজদের বিরুদ্ধে ঐক্যদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সকলে মিলে প্রতিরোধ গড়তে হবে। যারা বোমা বানায়, বোমা মারে তাদের ধরিয়ে দিতে হবে।”
খালেদা জিয়ার মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “এই মহিলার মানসিক বিকৃতি ঘটেছে। তিনি মানুষ পুড়িয়ে উল্লাস করছেন।”
সংলাপে বসতে নাগরিক সমাজের প্রস্তাবের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “কিছু লোক খেলা শুরু করেছে।”
সোমবার নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা স্বাক্ষরিত তিনটি চিঠি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বরাবর পাঠানো হয় বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
দুই প্রধান দলের বিপরীত অবস্থানের কারণে চলমান সঙ্কট অবসানের লক্ষ্যে ওই চিঠিতে সংলাপের উদ্যোগ নিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনকে অনুরোধ জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা তত্বাবধায়কের সময় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করেছেন, তাদের কথা আমাকে শুনতে হবে? তারা শুধু আমাকে আলোচনায় বসতে বলেন। কিন্তু যারা রাতের আঁধারে মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের চোখে দেখেন না। তারা বিএনপিকে বলুক এ সহিংসতা বন্ধ করতে। আমি তো বিএনপি নেত্রীর বাসায় গিয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে তিনি অপমান করেছেন। আমি কি আবারও যাবো!”
নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এজন্য এরইমধ্যে বেশ কয়েকজনকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।”
গত ৬ বছরের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “৬ বছর ধরে আমরা সুন্দরভাবে দেশ চালাচ্ছি। এ সময়ে দেশের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে।”
হরতাল-অবরোধে এসএসসি পরীক্ষার পরিস্থিতি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “বিএনপি ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষার সময়েও হরতাল দিচ্ছে।”