আজ পহেলা ফাল্গুন । ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। বছর ঘুরে প্রকৃতির নানা পরিবর্তন পেরিয়ে আবার এসেছে বসন্ত। বসন্তের আগমনে মানুষের মন আর প্রকৃতিতে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। মানুষের মনে জাগছে আনন্দ-জোয়ার আর প্রকৃতি ধারণ করছে রূপলাবণ্যে ভরা মনোহর পরিবেশ।
যুগ যুগ ধরে প্রেমপাগল মানব-মানবী ও তরুণ-তরুণী বসন্তকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে। ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি আর আয়োজনে এই দিনটিকে বরণ করছে। প্রেমিকার মতোই বসন্ত আলোড়ন তোলে, ঢেউ খেলে, নোঙর জাগায় কবির হৃদয়ে। তাই কবি সেই স্বপ্নিল আবেগের কথা তুলে ধরেন কবিতার ছন্দে। সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। তাই কবির ভাষায়- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।
বসন্ত প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাস। বসন্ত আগমন বার্তা পাওয়ার পর পরই প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্য নিয়ে মেলে তার রূপকে। বসন্তে দেখা মেলে প্রকৃতির বাহারি ফুলের।
এবার মিঠে কড়া হিমেল আমেজের মধ্যে দিয়ে শীত বিদায়ের পথে। আসছে বসন্ত। আগামী কয়েকদিন সকাল ও রাতের দিকে হিমেল আমেজ থাকলেও দুপুরের দিকে থাকবে গরম ভাব।
আমাদের দেশ ষড়ঋতুর দেশ। দু’মাস পর পর ঋতুর পরিবর্তন হয়ে থাকে। ফাল্গুন ও চৈত্র এ দু’মাস বসন্তকাল। ঋতুর পরিবর্তনে গাছের কচি ডালে নতুন পত্র-পল্লব হয়ে উঠে সু-শোভিত। এভাবে বসন্তের তাপদ্রোহে শীতের শ্রী-হীনতাকে নিক্ষেপ করে দূরে, অনেক দূরে। এভাবে সুরভিত সমীরনে গানের পাখি কোকিলের মনকাড়া মধুর কণ্ঠে উচ্চারিত সু-মধুর গান।
মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না। তাই পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব কেবল উৎসবে মেতে ওঠার সময় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, বাঙালিসত্তা। সে ঐতিহ্যের ইতিহাসকে ধরে রাখতে পারলেই বসন্ত উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতে পারবে বাঙালি চেতনাকে।
বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে।
এছাড়া আজ তরুণ-তরুণীরা বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, চারুকলা চত্বর, পাবলিক লাইব্রেরি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, বলধা গার্ডেন মাতিয়ে রাখবে সারাদিন। আজ দিনভর চলবে তাদের বসন্তের উচ্ছ্বাস প্রকাশ। ফোন, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়। নানা আয়োজনে বসন্তকে বরণ করবে বাঙালি।