একের পর এক পেট্রোল বোমা, আগুন আর হাতবোমায় সাধারণ মানুষ হতাহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, “এতে অবরোধ আহ্বানকারী খালেদা জিয়ার হৃদয়ে কি কোনো বেদনার সৃষ্টি হয় না?”
গত ৪২ দিনে অবরোধের আগুনে পুড়ে নিহতদের স্বজন এবং দগ্ধদের যন্ত্রণার কথা শুনে আবেগতাড়িত প্রধানমন্ত্রী এ প্রশ্ন করেন। এসময়য় চলমান এই নাশকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার দুপুরে শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় যাদুঘরে ‘বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাস-লুণ্ঠিত মানবতা’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনীতে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি সকলকে বলব- অন্তত বিএনপি নেত্রীকে বলেন, তিনি যেন মানুষের লাশের, মানুষ খুনের রাজনীতি বন্ধ করেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। এভাবে, নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা- এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
রাশিয়া, ভারত, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়া, ভুটান ও লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত, শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত, ভ্যাটিকান, চীন ও ওমানের উপ-রাষ্ট্রদূত, মালদ্বীপ, ইরাক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও পাকিস্তানের কনস্যুলার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
গত ৬ জানুয়ারি অবরোধ শুরুর প্রায় তিন সপ্তাহের মাথায় ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মৃত্যুতে শোকাহত মা খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে তার গুলশান কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় কার্যালয়ের গেইট না খোলায় কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী।
সে কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,”আমি তো উনার কাছে গিয়েছিলাম, দরজাও খুলল না।”
পেট্রোল বোমায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকার পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। প্রতিটি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। যাদের বাস, গাড়ি পুড়ে যাচ্ছে তাদেরও সহায়তা দিচ্ছি।’
ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে বলে এ সময় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “কেন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে? যারা ইসলামের নামে এসব করে তারা কি মানুষ? ধর্ম কি মানুষকে এসব নাশকতা করতে বলে?”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে এসময় শেখ হাসিনা বলেন, “পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত ব্যক্তিদের মায়ের কান্না কি তার (খালেদা জিয়া) বুকে ধরে না। এই যে মায়েরা কাঁদছে, তার কোনো অনুভূতি কি তার মধ্যে আছে? এই নির্মমভাবে মানুষ হত্যা করা কখনই মেনে নেওয়া যায় না।”
২০০১ সালের প্রসঙ্গ তেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিদ্যমান, আমরা ২০০১ সালের নির্বাচনের পর একই অবস্থা দেখেছিলাম। সে সময় ছয় বছরের কন্যাশিশুকেও ধর্ষণ করা হয়েছিল, কারণ তার বাবা-মা নৌকায় ভোট দিয়োছিল।”