ইলিশে আপ্যায়িত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার রাজ্যে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ না পাওয়ার অনুযোগ জানালে তাকে তিস্তা নদীতে পানির অভাবের কথা শুনিয়ে দিলেন শেখ হাসিনা।
ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরেও আলোচনার কেন্দ্রে ছিল তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, যা চার বছর আগে তার আপত্তিতে আটকে যায়।
শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর একসঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন মমতা, খাবারের আয়োজনে ছিল ইলিশের প্রাধান্য।
গণভবনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভাপা ইলিশ, সর্ষে ইলিশ, ভাজা ইলিশ আর ইলিশের ডিম ভাজা পরিবেশন করা হয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের।
তার আগে বৈঠকে মমতা বৈঠকে শেখ হাসিনার কাছে তার রাজ্যে ইলিশ না পাওয়ার অনুযোগ তুলে ধরেন।
ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে প্রিয় হলেও দেশের চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন সময় তা রপ্তানি বন্ধ রাখে বাংলাদেশ সরকার।
শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতার বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী যখন আলোচনার বিষয়বস্তু জানাতে সাংবাদিকদের সামনে আসেন, তখন তাকে এই বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।
ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাওয়া হলে ইকবাল সোবহান হেসে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইলিশ খুব কম পাচ্ছি’।
“জবাবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পানি আসলে ইলিশও যাবে।”
বৈঠকে অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বস্ত করেছেন, তিস্তা চুক্তির জট অচিরেই কেটে যাবে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য গণভবনে মধ্যাহ্ন ভোজের যে ফিরিস্তি প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন দিয়েছেন, তাতে ইলিশের পাশাপাশি রসমালাই ও মিষ্টি দইও দেখা যায়।
খোকন বলেন, মধ্যাহ্ন ভোজের শুরুতেই স্মোকড ইলিশ (ভাপা ইলিশ), ওনিয়ন রিং, ক্যাপসিকাম এবং বন রুটি ও মাখন পরিবেশন করা হয়।
এরপর মূলপর্বে কালি জিরা চালের ভাত, বিভিন্ন সবজির তরকারি, চিংড়ির মালাইকারি, রূপচাঁদা ভাজা, ইলিশ ভাজা, সর্ষে ইলিশ, ইলিশ মাছের ডিম ভাজা, চিতল মাছের কোপ্তা, রুই মাছের তরকারি, খাসির রেজালা ও হাড়ছাড়া মুরগির মাংসের তরকারি পরিবেশন করা হয়।
পরে কুমিল্লার রসমালাই এবং মিষ্টি দই দেওয়া হয়। সব শেষে চা আর কফি পরিবেশন করা হয়।
বঙ্গভবনে পৌঁছালে শেখ হাসিনা ফুল দিয়ে স্বাগত জানান মমতাকে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
শেখ হাসিনার জন্য মমতা নিজের আঁকা একটি ছবি নিয়ে এসেছিলেন। শেখ হাসিনা একটি ছবি এবং ঢাকাই জামদানি দিয়েছেন মমতাকে।
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঢাকায় প্রথম সফরে মমতার সঙ্গে কবি সুবোধ সরকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ ও ব্রাত্য বসু, অভিনেত্রী মুনমুন সেন, অভিনেতা প্রসেনজিৎ, দীপক অধিকারী (দেব) ও অরিন্দম শীল, কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা ঘোষ ও ইন্দ্রনীল সেন, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীও ছিলেন।
৪০ জনের বেশি সফরসঙ্গীর মধ্যে শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া ও সঞ্জীব গোয়েঙ্কা ছাড়াও মমতার সঙ্গে ছিলেন একদল সাংবাদিক। বিডিনিউজ প্রতিবেদন