চলমান সংকট উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে অবরোধ-হরতালের নামে চলমান ‘নাশকতা ও হত্যাকাণ্ডের’ প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এ হত্যা সাধারণ হত্যা নয়। এটা আমাদের স্বাধীনতা, অস্তিত্ব ও বাঙালি জাতির ওপর আঘাত। কাজেই আমাদের প্রতিঘাত দিয়ে এই আঘাত ফিরিয়ে দিতে হবে।”
শনিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ মানবরূপী দানব জীবন্ত মানুষগুলোকে পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে মারছে। এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হতে পারে না। এটা কোনও রাজনীতি নয়। এটা সম্পূর্ণ খুন, মানুষকে হত্যা করা। এ অবস্থা কখনও চলতে দেওয়া যায় না। এ জন্য গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
ইতিহাস-ঐহিত্যের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতি কখনও কারও কাছে পরাজয় মানে না, পরাভব মানে না। যে-কোনও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস আমাদের রয়েছে। সেই ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেবে, কীভাবে আমরা এ অবস্থা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাব। আমরা তা পারব। তবে এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। একবার সচেতন হয়ে রুখে দাঁড়ালে, তখন যেকোনও অবস্থা আমরা মোকাবেলা করতে পারি। এ দুর্যোগ ইনশাল্লাহ কাটিয়ে উঠতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাঝে-মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবেলা করতে হয়। এ মুহূর্তে আমরা মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে চলছি।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানি না তারা কার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এটা কি তাদের পছন্দ নয়? বাংলা ভাষা তাদের পছন্দ নয়। অর্থাৎ বাঙালি জাতি বিশ্বব্যাপী যে মর্যাদা পেয়েছে, সেই মর্যাদাটাই মনে হয় এ গোষ্ঠী ধরে রাখতে চায় না।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় বিদেশিদের বক্তৃতা-বিবৃতির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, আজ অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যখন বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। ঠিক এই সময় এমন অবস্থা সৃষ্টি করতে হলো যে, অন্যের কাছে থেকে পরামর্শ চেয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের সমস্যা আমরাই সমাধান করতে পারি।
অনুষ্ঠানে লেখিকা সেলিনা হোসেনের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ভাষা ও সাহিত্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার চালু করতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে বলেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জিন্নাত ইমতিয়াজ আলী।