নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার আটক প্রসঙ্গে বিবৃতি দিল বিএনপি। বিবৃতিতে মান্নাকে পরিবার সদস্যদের কাছে ফেরত পাঠানো ও দায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে দলের যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিটিতে পুলিশের বক্তব্যে বিস্ময়ও প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “মান্নাকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাকে আটক করা হয়নি। পুলিশের এ রকম বক্তব্যে আমরা বিস্মিত হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “যে প্রক্রিয়ায় এই পর্যায়ের একজন নাগরিককে তুলে নেওয়া হল তাতে রাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার এবং বেঁচে থাকার অধিকারের কোনো গ্যারান্টি অবশিষ্ট রইল না। আমরা সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকারি বাহিনীর কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।”
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে মঙ্গলবার ভোররাতে আটক করা হয়েছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। মান্নাকে আটক বা গ্রেপ্তার কোনোটাই করা হয়নি বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এঘটনায় মান্নার পরিবার বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। জিডিতে মান্নার পরিবার তার সন্ধান চাওয়ার পাশাপাশি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন।
এর আগে রোববার ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের অন্যতম উদ্যোক্তা মাহমুদুর রহমান মান্নার ফোনালাপের অডিও টেপ ফাঁস হয়। এতে মান্নাকে চলমান পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপের উদ্যোগে আগ্রহ প্রকাশ করতে শোনা যায়। পাশাপাশি বিএনপি জোটের আন্দোলন জোরদারে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার কথাও বলতে শোনা যায় তাকে। এই অডিও টেপ ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠেছে।
সরকার উৎখাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দুই-তিনটা লাশ ফেলে দেওয়ার’ কথা বলায় ষড়যন্ত্রের দায়ে মান্নাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মান্নাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাকে দেখা মাত্রই ‘ধোলাইয়ের’ ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক নেতা মান্না ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বাদ পড়ার পর বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টক শো-তে সরব ছিলেন।
নাগরিক সমাজের হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্বকারী মান্নার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে।
গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোট অবরোধ ডাকার পর সহিংসতায় প্রাণহানির মধ্যে ড. কামাল, মান্নার উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানানো হয়।
সংলাপ না হলে আবারো ওয়ান ইলেভেন হওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কথা উঠলে নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মান্না। ২০১২ সালে আত্মপ্রকাশ করা নাগরিক ঐক্য প্রথমে নাগরিক সংগঠন হিসেবে কাজ শুরু করলেও এটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠছে।
ছাত্রলীগ থেকে জাসদ, বাসদ, জনতা মুক্তি পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে ফেরা মান্না ২০০৭ সালে রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের পর সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান।
সে সময় দুই নেত্রীকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা, যা মাইনাস টু ফর্মুলা হিসেবে পরিচিত, তাতে মান্নার সক্রিয় ভূমিকার কথা বেশ আলোচিত। এজন্য তাকে ওয়ান-ইলেভেনের ‘কুশীলব’ বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।