সঠিক সিদ্ধান্ত ও আত্মবিশ্বাস দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বার বার বাধার মুখে পড়েছি। কিন্তু গণতন্ত্র বিজয়ী হয়েছে। গণতন্ত্রের যাত্রা অব্যাহত থেকেছে।
কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন হিসেবে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)-র প্রেসিডেন্ট পদে সাবের হোসেন চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ায় বুধবার সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক পদ দু’টিতে নির্বাচিত হওয়ায় শিরীন শারমীন ও সাবের চৌধুরীকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন “এটাকে আমি বলবো গণতন্ত্রের বিশ্ব জয়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের দু’জন প্রার্থী আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থার নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। এ জন্য তাদের অভিনন্দন জানাই। আর এ বিজয় দেশের জনগণের। কারণ, ২০০৮ সালে সিপিএ’র সদস্য পদ স্থগিত হওয়ার পর জনগণ আমাদের বিজয়ী করেন। এরপর আমরা আবার সদস্য পদ ফিরে পাই।
তিনি বলেন, আত্মবিশ্বাস ও সঠিক সিদ্ধান্তই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
দু’টি নির্বাচনেই বাংলাদেশের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। অনেকেই জানতে চেয়েছেন, দু’টি পদে প্রার্থী দিয়েছেন, কী হবে? উত্তরে বলেছিলাম, যা হয় হবে। বিজয়ী হবোই।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন সিপিএ এর নবনির্বাচিত চেয়ারপার্সন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং আইপিইউ এর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী।
আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার সন্দ্বীপ চক্রবর্তী, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টি (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ প্রমুখ।
বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয় শিরীন শারমীন ও সাবের হোসেন চৌধুরীকে। তাদের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দশম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যরা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক আমলাগণ এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা।
সন্ধ্যা সাতটায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ভিডিও চিত্র প্রদর্শনীর পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ব্যাপক আলোকসজ্জা করা হয় সংসদভবনে। পাশাপাশি জোরদার করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা হয় নিরাপত্তা বেষ্টনী।
ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউনদে’তে অনুষ্ঠিত ভোটাভোটিতে গত ৯ অক্টোবর সিপিএ চেয়ারপারসন পদে ৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন স্পিকার শিরীন শারমীন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ক্যারিবীয় অঞ্চলের কেইম্যান আইল্যান্ডসের স্পিকার জুলিয়ানা ও কনর। তিনি পান ৬৭ ভোট।
তিন বছর মেয়াদী ৩৫ সদস্যের নির্বাহী কমিটির এই নির্বাচনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চেয়ারপারসন পদে নির্বাচিত হন শিরীন শারমিন। নির্বাচনে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্রের ১৭৫টি পার্লামেন্টের ৩২১ জন ভোটার উপস্থিত থাকলেও ভোট দেন ৩৭ জন।
অপরদিকে গত ১৬ অক্টোবর সাবের হোসেন চৌধুরী আইপিইউ’র প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইপিইউ’র ১৩১তম সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাবের হোসেন।
নির্বাচনে তিনি পান ১৬৯ ভোট । তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার স্পিকার ব্রনউইন বিশপ পেয়েছিলেন ৯৫ ভোট।
আইপিইউ নির্বাচনে সাবের হোসেন চৌধুরী ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার এমপি নুরহায়াতি আলী আসিগাফ, অস্ট্রেলীয় আইনসভার স্পিকার ব্রনউইন বিশপ ও মালদ্বীপের আইনসভার সাবেক স্পিকার আবদুল্লাহ শহীদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইনসভার আন্তর্জাতিক সংগঠন আইপিইউ। ১৮৮৯ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবের হোসেন চৌধুরী।