কথোপকথন ফাঁসের পর আলোচনায় থাকা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ভোররাতে ভাইজির বনানীর বাসা থেকে আটকের প্রায় ২১ ঘণ্টা পর গুলশান থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে রাত ১১টায় ধানমন্ডি ১৫ নাম্বারে অবস্থিত স্টার কাবাবের সামনে থেকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নাগরিক ঐক্যের এই আহ্বায়ককে গুলশান থানায় সেনাবাহিনীতে উসকানি প্রদানের অভিযোগে দায়ের করা মামলাটিতে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর তাকে র্যাব কার্যালয় থেকে হস্তান্তর করা হয় মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে।
মাহমুদুর রহমান মান্না গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে আছেন বলে নিশ্চিত করে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আজ আদালতে হাজির করে ১০দিনের রিমান্ড চাইবে পুলিশ’
মান্নার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমানিত হলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে হবে বলেও এসময় জানান গোয়েন্দা পুলিশের এই মুখপাত্র।
মাহমুদুর রহমান মান্না গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
গুলশান থানায় করা মামলার বিষয়ে র্যাব জানায়, “পেনাল কোডের ১৩১ ধারায় গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, এই ধারায় সশস্ত্র বাহিনীকে বিদ্রোহে উসকানির কথা বলা হয়েছে। মামলা নম্বর ৩২, তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি।”
গুলশান থানার এসআই সোহেল রানার করা এই মামলায় অজ্ঞাত আরও একজনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ ২৫ ফেব্রুয়ারী তাকে কোর্টে হাজির করা হবে বলে জানিয়েছেন মান্নার স্ত্রী।
তার আগ পর্যন্ত তাকে আটকের খবর অস্বীকার করে আসছিল পুলিশ। অবশ্য র্যাবের কোনো বক্তব্য গণমাধ্যমে আসেনি।উল্লেখ্য রোববার ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের অন্যতম উদ্যোক্তা মাহমুদুর রহমান মান্নার ফোনালাপের অডিও টেপ ফাঁস হয়। এতে মান্নাকে চলমান পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপের উদ্যোগে আগ্রহ প্রকাশ করতে শোনা যায়। পাশাপাশি বিএনপি জোটের আন্দোলন জোরদারে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার কথাও বলতে শোনা যায় তাকে। এই অডিও টেপ ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠেছে।
এদিকে মান্নাকে মঙ্গলবার ভোররাতে আটক করা হয়েছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তবে মান্নাকে আটক বা গ্রেপ্তার কোনোটাই করা হয়নি বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ডিএমপি কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, “মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক বা গ্রেপ্তার কোনোটাই করা হয়নি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বাইরে আরও অনেক ইউনিটের লোকজন গ্রেফতার করতে পারে। তারাও নিয়েছে কিনা আমরা সে ব্যাপারে সঙ্গে যোগাযোগ করবো।”
তিনি আরও বলেন, “তার পরিবার যদি আইনগত সাহায্য চায় তবে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা করব। যে কোনো নাগরিকের আটক কিংবা মিসিং হওয়ার বিষয় আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে থাকি। তার বিষয়টিও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।”
এ ঘটনায় মান্নার পরিবার মঙ্গলবার দুপুরে বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে বর্তমানে সংলাপের এই উদ্যোক্তার সন্ধান চাওয়ার পাশাপাশি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন।
মান্নাকে আটকের খবরে বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে তাকে পরিবারের কাছে ফেরত দিতে সরকারকে আহ্বান জানান।
এদিকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সশরীরে হাজির করানোর জন্য মঙ্গলবার বিকালে ড. কামাল হোসেন ও অন্যান্য আইনজীবীরা একটি রিট চেয়ে আবেদন করেছে, যেটার আগামীকাল সেটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।