সশস্ত্র বাহিনীকে বিদ্রোহে উসকানির অভিযোগে দায়ের করা জানিন অযোগ্য মামলায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
মামলার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল বারী মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমানের আদালতে এ রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
এ সময় মান্নার পক্ষে জামিন আবেদন করা হলেও বিচারক তা নাকচ করে দেন।
ঢাকা মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমানের আদালতে বুধবার বেলা তিনটার দিকে এ আবেদনের শুনানির জন্য মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ডিবি কার্যালয় থেকে সিএমএম কোর্টে হাজির করা হয়। মান্নার উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মুখ্য মহানগর হাকিম রিমান্ডের এই আবেদন মঞ্জুর করেন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সিএমএম কোর্টে হাজির করা হয়, তখন তার কিছু সমর্থক ও আইনজীবীকে মান্নাকে আটকের প্রতিবাদে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এর আগে বুধবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম কার্যালয়ে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক অনির্ধারিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার মান্নার বিরুদ্ধে সেনাবিদ্রোহে উসকানি ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
মান্নাকে আটকের বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে ধানমণ্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে র্যাব-২ তাকে আটক করে।’
রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে- জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, ‘মামলায় যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
আইসিটি আইনে মামলা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি তদন্তকারী কর্মকর্তার বিষয়। তদন্তে যদি মনে হয় তবে সেটি তদন্তকারী কর্মকর্তা চিন্তা করবেন।’
এর আগে, মঙ্গলবার ভোররাত ৩টায় গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ভাতিজি শাহনামা শারমিনের বনানীর বাসা থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক করা হয় বলে দাবি করেন তার স্ত্রী মেহের নিগার। তবে মান্নাকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম।
২১ ঘণ্টা পর বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে র্যাব মান্নাকে গোয়েন্দা পুলিশের মিন্টো রোডের কার্যালয়ে হস্তান্তর করে। র্যাব দাবি করে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে মান্নাকে আটক করেছে তারা। তবে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মান্না কোথায় ছিলেন বা তাকে ডিবি পরিচয়ে কারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
এদিকে মান্নার ভাইয়ের স্ত্রী বেগম সুলতানা মঙ্গলবার দুপুরে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এর আগে রোববার ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের অন্যতম উদ্যোক্তা মাহমুদুর রহমান মান্নার ফোনালাপের অডিও টেপ ফাঁস হয়। এতে মান্নাকে চলমান পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপের উদ্যোগে আগ্রহ প্রকাশ করতে শোনা যায়। পাশাপাশি বিএনপি জোটের আন্দোলন জোরদারে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার কথাও বলতে শোনা যায় তাকে। এই অডিও টেপ ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠেছে।
সরকার উৎখাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দুই-তিনটা লাশ ফেলে দেওয়ার’ কথা বলায় ষড়যন্ত্রের দায়ে মান্নাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মান্নাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাকে দেখা মাত্রই ‘ধোলাইয়ের’ ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক নেতা মান্না ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বাদ পড়ার পর বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টক শো-তে সরব ছিলেন।
নাগরিক সমাজের হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্বকারী মান্নার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে।
গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোট অবরোধ ডাকার পর সহিংসতায় প্রাণহানির মধ্যে ড. কামাল, মান্নার উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানানো হয়।
সংলাপ না হলে আবারো ওয়ান ইলেভেন হওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কথা উঠলে নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মান্না। ২০১২ সালে আত্মপ্রকাশ করা নাগরিক ঐক্য প্রথমে নাগরিক সংগঠন হিসেবে কাজ শুরু করলেও এটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠছে।
ছাত্রলীগ থেকে জাসদ, বাসদ, জনতা মুক্তি পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে ফেরা মান্না ২০০৭ সালে রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের পর সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান।
সে সময় দুই নেত্রীকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা, যা মাইনাস টু ফর্মুলা হিসেবে পরিচিত, তাতে মান্নার সক্রিয় ভূমিকার কথা বেশ আলোচিত। এজন্য তাকে ওয়ান-ইলেভেনের ‘কুশীলব’ বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।