বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জঙ্গিনেত্রী বলে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোন জঙ্গিনেত্রীর স্থান বাংলাদেশের মাটিতে হবে না। উনার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে কেবল দুর্নীতির মামলা নয়, খুনের মামলাও দেওয়া হয়েছে। উনি হুকুমের আসামি। একজন খুনির শাস্তি যা হয়, সেই শাস্তি তাকে পেতেই হবে। জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কোনও ক্ষমা নেই। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে শনিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হুকুমের আসামি খালেদা জিয়ার শাস্তি হবেই। আন্তর্জাতিকভাবে যে শাস্তি জঙ্গিদের দেওয়া হয়, সেই শাস্তিই দেওয়া হবে।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। হত্যা-খুন করে কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। মানুষের বিজয় ঠেকাতে পারবে না। এদেশের মানুষের বিজয় হবেই।
জিয়া অফানেজ ট্রাস্ট দুনীতির মামলার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, উনার (খালেদা জিয়ার) বিরুদ্ধে আমরা মামলা দেইনি। মামলা দিয়েছেন উনার প্রিয় মইনউদ্দীন-ফখরুদ্দীনরা। ওই মামলায় ৬৭দিন তারিখ পড়েছে। তার মধ্যে উনি গিয়েছেন মাত্র ৬দিন। শেষ দিন গিয়েছিলেন লাঠিসোটা নিয়ে। মনে করেছিলেন কোর্টকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পার পেয়ে যাবেন। সততা আর বিশ্বাস থাকলে মামলা মোকাবিলা করতে উনার ভয় কেন? মামলায় শাস্তি অবধারিত, এই ভয় নিশ্চয় উনার আছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল সফল হয়নি বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ যখন শান্তিতে থাকে, তখন জঙ্গিনেত্রীর মনে অশান্তির আগুন দাউ-দাউ করে জ্বলে ওঠে। সেই অশান্তির আগুনে উনি এখন বাংলাদেশের মানুষকে পুড়িয়ে মারছেন। অফিসে বসে হরতাল-অবরোধের ডাক দিচ্ছেন। ঘর ছেড়ে অফিসে থাকার রহস্য ও মাজেজা কী? ওখানে বসে উনি কী বিপ্লব করতে চান?
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, কে মানে তার হরতাল-অবরোধ? কেউ তো উনার হরতাল অবরোধ মানেন না। জঙ্গিনেত্রীর কোনও নির্দেশ এদেশের মানুষ মানেন না। তিনি বলেন, আন্দোলনেরর নামে উনি নিজেকে অন্তরীণ করে রেখেছেন। অফিসে বসে দলের নেতাদের ফোন করে নির্দেশ দেন। হুকুম দিয়ে বোমা হামলা চালাচ্ছেন। পেট্রোল বোমা মেরে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারছেন। আর এক শ্রেণির আঁতেল লোক আছেন, তারা দেখেও দেখেন না। তারা বলেন, বোমা মারছে কিন্তু কে মারছে তা দেখেও দেখেন না।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বোমাবাজির সঙ্গে জড়িত কতিপয় ব্যক্তির ছবি দেখিয়ে ও নাম উল্লেখ করে বলেন, যেসব শিক্ষিত লোক দেখেও দেখে না তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে হয়। অবশ্য চোখ থাকতে কেউ অন্ধ হলে তাদের দেখাবে কে? তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দেশের মানুষের সঙ্গে ধোঁকাবাজি-ভাঁওতাবাজি করছেন। বিদেশিদের সঙ্গেও ভাঁওতাভাজি করছেন। ভারতের বিজিপির সভাপতি অমিতশাহের ফোনালাপ নিয়ে উনি ধোঁকাবাজি করেছেন। আমেরিকার ছয়জন কংগ্রেসম্যানের চিঠি জাল করে ভাঁওতাবাজি করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে এক বিএনপি নেতার ছেলের সাজার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও তার ক্ষতির পরিকল্পনা করে এফবিআইয়ের এক এজেন্টকে ঘুষ দেওয়ার ঘটনা এফবিআইয়ের হাতে ধরা খেয়েছে। জড়িত থাকার দায়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাসাস নেতার ছেলেকে কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কোর্ট। এখন খালেদা জিয়া কী জবাব দেবেন?
শনিবারের সমাবেশে আসা মিছিলেও বিএনপি-জামাত বোমা হামলা চালিয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোট নাশকতা চালাচ্ছে। দেশের নিরাপরাধ মানুষদের পুড়িয়ে মারছে।
সমাবেশমুখী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকের সমাবেশের আসার পথে বোমা হামলা করা হয়েছে। তারা এখন আহত হয়ে হাসপাতালে। এসব ধ্বংসযজ্ঞ কীসের জন্য? আমরা ধৈর্য ধরে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিচ্ছি। আর উনি বোমা মারছেন। ভেবেছেন টা কী? মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কোনওদিনই সহ্য করা হবে না। দেশের অগ্রযাত্রা ব্যহত করতে হত্যাকাণ্ড বরদাস্ত করবো না। বোমা হামলা প্রতিহত করে এগিয়ে যাবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বিদেশি শক্তির মদদ পাওয়ার আশা করেছিলেন, কিন্তু তার সে আশা পূরণ হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আশা ছিল, কেউ এসে ক্ষমতা নিয়ে তাকে বসাবে। কিন্তু তারা সাহস পায়নি। বিদেশীদের ওপর তার আশা ছিল কিন্তু তারা বলেছে, জঙ্গিদের সঙ্গে কোনো আপস নয়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। তাহলে খালেদার সঙ্গে আছে কে? আছে সন্ত্রাসী।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজুলল করিম সেলিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রমুখ।