সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ রমনী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যানকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়েছে নর, অর্ধেক তার নারী।
আজ ৮ মার্চ রোববার, বিশ্ব নারী দিবস। নারী সমাজের জন্য দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, মানুষ হিসেবে একজন নারীর পরিপূর্ণ অধিকারের স্বীকৃতি মিলেছে এ দিনটিতে। নারীর প্রতি সম্মান জানিয়ে ১৯৮৪ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করে জাতিসংঘ। ঐতিহাসিক সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ এ সিদ্ধান্ত নেয়। ‘মেইক ইট হ্যাপেন’- এ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাপী আজ দিবসটি পালিত হচ্ছে। জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ আর নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে এবারের স্লোগান।
শতাব্দীকাল আগে শুরু হয়েছিল দিবসটি উদযাপন। দিনটি ছিল ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। নিউইয়র্কের একটি সুঁচ কারখানার নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা করার দাবিতে সেদিন রাস্তায় নেমেছিলেন। বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রশাসন। পুলিশকে লেলিয়ে দেয়া হয়। পুলিশ তাদের ঠেকাতে নির্বিচারে গুলি চালায়। সূচনা হয় এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের। আন্দোলন করায় গ্রেফতার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। এ ঘটনায় ৩ বছর পর ১৮৬০ সালের এ দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’।যুক্তরাষ্টে ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার তারা আদায় করে নেন। ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৮ মার্চ নারী দিবস পালনের জন্য উত্থাপিত বিল অনুমোদন পায়। এরপর ১৯৮৪ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করে জাতিসংঘ। ২০০৯ সালে বিশ্বের ২৯টি দেশে সরকারি ছুটিসহ প্রায় ৬০টি দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়। ২০১০ সালে বিশ্বজুড়ে নারী দিবস পালন করা হয়। বিশ্বের অনেক দেশ ৮ মার্চকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনেগ্রো, রাশিয়া, তাজাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, জাম্বিয়া।এছাড়া চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার, নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারি ছুটি পায়।
আসুন বাংলাদেশের নারীদের সম্পর্কিত কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম নারী ভিপি মাহফুজা খানম।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী শিক্ষক করুণাকণা গুপ্তা, ইতিহাস বিভাগ।
দাবায় প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা গ্রান্ড মাস্টার রানী হামিদ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম নারী অধ্যক্ষ ডা. হোসনে আরা তাহমিন।
বাংলাদেশ সংবিধান রচনা কমিটির একমাত্র নারী সদস্য বেগম রাজিয়া বানু।
তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্র।
মুক্তিবেটি নামে খ্যাত বাংলাদেশের নারী মুক্তিযোদ্ধা আদিবাসি নারী কাকন বিবি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী ফজিলাতুন্নেসা।
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম নারী শহীদ মেহেরুন্নেসা এবং বাংলাদেশের পক্ষে এভারেস্টজয়ী প্রথম নারী নিশাত মজুমদার।
বাংলাদেশের প্রথম নারী সামরিক পাইলট ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুৎফী ও ফ্লাইট লে. নাইমা হক।
অন্য দেশের মতো বাংলাদেশও এ দিবসটি পালন করে থাকে। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও নারী সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পৃথকভাবে র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।