বিশ্বকাপের চলতি আসরে একটি মাত্র ম্যাচ জিতলেই শেষে আটে পৌঁছে যাবে মাশরাফিরা। এ জন্য গত ২ দিন ধরে নিজেদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতিই নিয়েছেন সাকিব-মুশফিক-মাশরাফিরা। অ্যাডিলেডের ওভালে সোমবার সাড়ে ৯টায় শুরু হবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ। এ ম্যাচে নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলার লক্ষ্য স্থির করেছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আর ম্যাচ জিতে সবাইকে আনন্দ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। রবিবার অনুশীলন শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেছেন।
দলে ইমরুলের থাকার সম্ভাবনা কতটুকু এ প্রশ্নে মাশরাফি বলেছেন, ‘ইমরুল কাল (শনিবার) এসে পৌঁছেছে, অনুশীলনও করেছে। অনুশীলনে ভাল করেছে। আজ (রবিবার) আরও একটা দিন আছে ওর(ইমরুল) প্রস্তুতি নেওয়ার। অবশ্যই ওর(ইমরুল) সুযোগ আছে খেলার। আমাদের ওপেনার ইনামুল ইনজুরি আক্রান্ত। ওর(এনামুল) জায়গায় এসেছে ইমরুল। খেলার সুযোগ অবশ্যই আছে ইমরুলের। আশা করব ইমরুল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলবে। এই সুযোগটা ওর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ও বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে ছিলই না। যেহেতু একটা সুযোগ পেয়েছে এটা কাজে লাগানোর ভাল একটা অপশন সে (ইমরুল) পাচ্ছে।’
ইংল্যান্ডের জন্য এ ম্যাচটা ডু অর ডাই ম্যাচ। এই ম্যাচে স্নায়ুর চাপ থাকবে। এমনও বলা হচ্ছে এই ম্যাচে বাংলাদেশ ফেভারিট এটা দলের জন্য কতটা স্বস্তির এ প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘২টি দিকই আছে। আমরা যদি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা জিততে পারতাম, তাহলে অনেক রিলাক্স থাকতে পারতাম। স্নায়ু চাপের কথা বললে আমি বলব ইংল্যান্ড আমাদের চেয়ে এই ধরনের ম্যাচ আরও বেশি খেলেছে। আমাদের এসব নিয়ে চিন্তা না করাই ভাল। আমরা জানি আমাদের খুব ভাল সুযোগ আছে। আমাদের কাজ হবে আমাদের ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং ৩ বিভাগে মনোযোগ দেওয়া। এটা করতে পারলেই চাপ অনেক কমে যাবে। আর কারা চাপে থাকবে এটা বলা খুব কঠিন। তবে আমি আমাদের কথা বলতে পারি, আমরা খুব এক্সসাইটেড খেলার জন্য। আমরা আমাদের সেরা খেলাটা খেলার জন্যই অপেক্ষা করছি।’
ইংল্যান্ডের খারাপ সময় যাচ্ছে, আমাদের লক্ষ্য পূরণে এই জিনিসটা কতটুকু আলোচনায় এ প্রশ্নে মাশরাফি বলেছেন, ‘এগুলো খুব স্বাভাবিক, এসব নিয়ে আলোচনা সব সময়ই হয়। সবাই চিন্তা করেছে আফগানিস্তান-স্কটল্যান্ড বাদে বাকি ৪টি দলের যে কাউকে হারাতে পারলেই আমাদের সুযোগ থাকবে, আমাদের সামনে সেই সুযোগটাই এসেছে। ইংল্যান্ডকে যেভাবে সমালোচনা করা হচ্ছে আমি জানি না তারা কি চিন্তা করছে। আমরাও আসলে ভাল খারাপের ভেতর দিয়েই গিয়েছি। এই টুর্নামেন্টে আমাদের যেমন যাওয়ার কথা ছিল সেভাবেই যাচ্ছে। আশা করি কাল(সোমবার) ম্যাচটাও আমরা এভাবে খেলতে পারি তবে আমাদের কাজটা সহজ হবে।’
ইংল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনাদের ব্যাপারে একটা ভীতি আছে, সেক্ষেত্রে একজন অতিরিক্ত স্পিনার খেলানোর কোন পরিকল্পনা আছে কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘সুযোগ অবশ্যই আছে। আগের ম্যাচেও ছিল। আসলে সব সময় উইকেট, দলের কম্বিনেশন বিবেচনা করে মূল দলটা নির্বাচন করা হয়। মাঝে মাঝে আমারও মনে হয়েছে একটা স্পিনার খেলালে হয়তো ভাল হতো। আবার সব কিছু ব্যালেন্স করেও খেলতে হয়। কারণ কন্ডিশনটা সব সময় মানিয়ে নেওয়া যায় না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্য স্পিনার খেলানোর সুযোগ আছে। আমি মনে করি ইংল্যান্ডের জন্য সুবিধা না হয়, এমন একটা দলই খেলানো হবে।’
সমীকরণ নিয়ে দলের মধ্যে আলাপ আলোচনা হচ্ছে কিনা এই ম্যাচটা জিততে কতটা প্রস্তুতি বাংলাদেশের এ প্রশ্নে মাশরাফি বলেছেন, ‘যে সমীকরণ আমরা টুর্নামেন্টে শুরুর আগে জানতাম সেটাই কিন্তু এখন আমাদের সামনে এসেছে। এখন সব কিছুই নির্ভর করে আমরা কেমন খেলব তার উপর। আমাদের সবাই খুব আত্মবিশ্বাসী নতুন এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য। অবশ্যই চাপ কিছুটা থাকবে। এটা স্বাভাবিক ভাবেই থাকে। প্রায় ১৬ কোটি মানুষ দেশে অপেক্ষা করছে, এখানেও সবাই অপেক্ষা করছে ভাল কিছু দেখার জন্য। এখানে চাপটা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই চাপ থেকে বের হয়ে ভাল কিছু করার মাঝেই আনন্দ। আমার বিশ্বাস সবাই এই আনন্দটুকু পেতে চাচ্ছে। সবাইকে আনন্দ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করব আমরা।’
একজন পেসার হিসেবে উইকেট কেমন মনে হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য এই উইকেট কতটা উপযোগী এ প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘উইকেট ফ্লাট। প্রচুর রান হবে এই উইকেটে। আমার বিশ্বাস আমরাও রান করতে পারব। আমরা ৩১৮ রান চেজ করে জিতেছি। যাদের বিপক্ষেই করি না কেন ৩০০ প্লাস রান চেজ করা কিন্তু সহজ ব্যাপার নয়। হয়তো ওদের সঙ্গে এই রান চেজ করা একটু কঠিন হবে। তারপরও আমার মনে হয় এখানে ২৭০-২৮০ ভাল স্কোর হবে। আমাদের ব্যাটসম্যান যারা আছে তারা সবাই আত্মবিশ্বাসী, সবাই রান করেছে। সাকিব-মুশফিক ২ জনই রানের ভেতর ছিল। তামিম ফর্মে ফিরেছে। বোলিংয়ে কথা বললে বলব ছোট খাটো ভুল কিছু হয়েছে শেষ ম্যাচে। আশা করি কাল(সোমবার) ম্যাচে বোলারা তাদের কাজগুলো ভাল ভাবেই শেষ করবে।’
ইংল্যান্ড চাপে থাকবে তাই আমাদের সুযোগ থাকবে, এটা কিভাবে কাজে লাগাতে চান এ প্রশ্নে মাশরাফি বলেছেন, ‘সবাই সবার কঠিন সময় থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে। ছোট দলের বিপক্ষে খেলার সময় একটা চাপ তৈরি হয় এটাই স্বাভাবিক। এখন আমরা যদি এই সুযোগ নিতে পারি, দ্রুত সুযোগগুলো তৈরি করতে পারি। তবে এটা আমাদের সাহায্য করবে।’
এমসিজিতে বড় মাঠে ভাল হয়নি, অ্যাডিলেডে কি তাই কোনো নেতিবাচক কিছু কাজ করছে এ প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘আমরা এই ধরনের মাঠে কখনই খেলে অভ্যস্ত নই। ভাল অবস্থানে থেকে এগুলো নিয়ে চিন্তা না করাই ভাল। বড় মাঠ কিংবা ছোট মাঠ এটা কোনো সমস্যা নয়। যদি আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে পারি এগুলো হয়তো কোনো সমস্যাই হবে না।’