মাস দুয়েক আগেও তাঁকে নিয়ে ছিল কানাঘুষা। ইনসুইং, আউটসুইং বাদ দিয়ে তাঁকে ঘিরে ছিল জেল, জামিন, উকিল, ফোনালাপ ফাঁস -এমন সব শব্দের মেলা। এমনকি তিনদিন কাটাতে হয়েছে কারাগারেও। অনেকের কাছে ‘ভিলেন’ আখ্যা পাওয়া সেই রুবেলই এখন পুরো জাতির নায়ক। লড়াকু রুবেলের কীর্তি হার মানিয়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্রের কাহিনীকেও। দুঃসময়কে পরাজিত করে রুবেল আজ সত্যিকারের নায়ক।
ক্রিকেটার রুবেলের সাফল্যে দারুণ উচ্ছ্বসিত সেই মডেল-অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপি আজ বলছেন, ‘চমক দেখিয়েছে রুবেল। আমি অনেক খুশি। এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। বল ছিল ১২টি। বাংলাদেশের দরকার দুটি উইকেট। দুঃসংবাদ জ্বলজ্বল করছিল, কারণ তাসকিনের করা ৪৭তম ওভারেই ক্রিস ওকসের ক্যাচটা ছেড়ে দিলেন তামিম!
৪৯তম ওভার। বল করতে এলেন রুবেল! বিস্ময়ের শুরু সেখানেই। প্রথম বলে ব্রডকে বোল্ড করে দিলেন তিনি। তারপরেও দুরু দুরু করছে বুক! দলটা যে ইংল্যান্ড। পরের বলটা ঠেকালেন অ্যান্ডারসন। এরপরের বলেই আবার বোল্ড! বাংলাদেশ শেষ কবে এমন দাপুটে ওভার দেখেছে?
ক্রিকেট ব্যাকরণে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ম্যান অব দ্য ম্যাচ। আর মানুষের মুখে মুখে কেবলই রুবেল! সত্যিকারের নায়ক রুবেল।
গত জানুয়ারি মাসেও কেউ নিশ্চিত ছিল না যে রুবেল বিশ্বকাপে খেলবেন। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় যে তিনি কারাগারে! এমনকি বিশ্বকাপগামী দল থেকে তাঁকে বাদ দেওয়ার জন্য আদালতে রিটও করেছেন হ্যাপি নামের এক চিত্রনায়িকা।
নায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপি গত ১৩ ডিসেম্বর মিরপুর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রুবেল হোসেনকে আসামি করে মামলা করেন। এর ফলে ৯ জানুয়ারি রুবেলকে কারাগারে যেতে হয়।
এখানেই শেষ নয়, রুবেলের বিশ্বকাপ আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে হ্যাপির করা এক রিটে। রুবেলকে যেন বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ দেওয়া হয় সে জন্য হ্যাপি উচ্চ আদালতে রিট করেন। ৬ জানুয়ারি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দেন।
জামিন না পেলে রুবেলের জায়গায় অন্য ক্রিকেটারের কথা ভাববেন বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্মকর্তারা।
১১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন রুবেল। আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইমরুল কায়েস তাঁকে জামিন দেন। জামিন আদেশ ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছালে ওইদিন বিকেল পৌনে ৫টায় রুবেল মুক্ত হন। ফিরে আসেন মাশরাফি-সাকিব-মুশফিকদের দলে।