খেলা হয়েছে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী অ্যাডিলেডের ওভাল মাঠে। তাসিকিনের বলে জেসি বাটলারের কট বিহাইন্ড এবং সাকিব আল হাসানের থ্রোতে সিজে জর্ডানের রান আউটের পর বাংলাদেশের জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সবাই ফুরফুরে মেজাজে। এরই মধ্যে সোমবার বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের ২৯তম বৈঠক শুরু হয়।
যদিও পৌনে পাঁচটার অধিবেশন শুরু হয় সোয়া পাঁচটার পর। বার বার ঘণ্টা পিটিয়েও কোরাম মেলানো যাচ্ছিল না। কারণ সাংসদেরা লবিতে বসে বিটিভিতে খেলা দেখছিলেন। চিফ হুইপ আর হুইপরা এসে বার বার সাংসদের উদ্দেশে বলে যাচ্ছিলেন, ভিতরে চলেন। বাংলাদেশ জিতে যাচ্ছে। টেনশনের কিছু নেই। কিন্তু হঠাৎ করে স্টুয়ার্ট ব্রডের ৬ বলে ৯ পুরো সংসদ ভবনকে স্তব্ধ করে দেয়।
কারণ ক্রিজে তার সঙ্গে তখনো শেষ পর্যন্ত ৪২ রানে নট আউট থাকা সি আর ওয়েকস। তখন ইংল্যান্ডের রান ৪৮ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ২৬০। তারই আগের ওভারে তাসকিনের বলে ওয়েকস এর সহজ ক্যাচ ফেলে দেন তামিম ইকবাল। সংগত কারণে পুরো সংসদই তখন নিরব।
অধিবেশন কক্ষে তখন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা করে যাচ্ছিলেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। কিন্তু তার বক্তব্যে কারো মনোযোগ নেই। সবাই মোবাইল ফোনের মনিটরের দিকে তাকিয়ে। ক্রিকইনফোতে খেলার হালানাগাদ অবস্থা দেখছিলেন।
৪৮তম ওভারে তাসকিনের কাছ ১৬ রান আদায় করে নেওয়া এবং তামিম ইকবালের হাত ফসকে ক্যাচ পড়ে যাওয়ার পর অনেকেই তখন নিশ্চিত, বাংলাদেশ হারতে বসেছে। হাতে দুই উইকেট। দরকার ১২ বলে ১৬ রান।
কে জানতো ৪৯তম ওভারে রুবেলের প্রথম ও তৃতীয় বলে নিঃশেষ হয়ে যাবে ইংল্যান্ড! প্রথম বলে ব্রড এবং তৃতীয় বলে জিমি অ্যান্ডারসনকে সরাসরি বোল্ড করে দিলেন রুবেল।
অ্যাডিলেড ওভালে কয়েক হাজার বাংলাদেশির আনন্দ আর উচ্ছ্বাস প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউয়ে চড়ে আচড়ে পড়ল লুই আই কানের স্থাপত্য জাতীয় সংসদ ভবনে। বিজয়ের উল্লাসে ফেটে পড়ে অধিবেশন কক্ষসহ পুরো সংসদ ভবন।
তখন ডেপুটি স্পিকার ভূমিমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝে বলে উঠলেন, এ বিষয়ে আমরা একটু পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব। এ সময় ভূমিমন্ত্রী প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললেন, টাইগাররা জিতে গেছে। এজন্য সংসদের পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।
এরপরই একের পর এক অভিন্দন বার্তায় স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও চিফ হুইপসহ সকলেই ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ে অভিন্দন জানান।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর অভিনন্দন
অভিনন্দন বার্তায় স্পীকার বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এ বিজয় সমগ্র বাংলাদেশের বিজয়। এ বিজয় বাংলাদেশের ক্রিকেট তথা সমগ্র বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালেও নৈপূণ্যপূর্ণ খেলা প্রদর্শনের মাধ্যমে দর্শকদের আনন্দিত করবে এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদাকে আরো সুপ্রতিষ্ঠিত করবে বলে স্পীকার আশা প্রকাশ করেন।
ডেপুটি স্পীকারের মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার অভিনন্দন
অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ জয়ী হয়ে সমগ্র জাতিকে গৌরবান্বিত করেছে। এ অর্জন ক্রিকেট জগতে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করবে। তিনি ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ দলের ধারাবাহিক সাফল্য কামনা করেন।
চীফ হুইপ আ. স. ম ফিরোজের অভিনন্দন
অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ জয়ী হয়ে আমাদের জন্য যে আনন্দ ও সম্মান বয়ে এনেছে তা সত্যিই অনন্য। বাংলাদেশের এ সাফল্যের ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।