সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমা আর হরতাল-অবরোধের নামে নৈরাজ্যের কারণে এমনিতেই দেশ যখন প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এই সময়ে জাতি তার মতো একজন জনপ্রিয় ও নিবেদিত প্রাণ নেতাকে হারালো।
মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে সংসদ সদস্য মরহুম ডা. সিরাজুল আকবরের উপর জাতীয় সংসদে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার মৃত্যুতে জাতি হারিয়েছে একজন প্রতিভাবান, সুদক্ষ শিশু বিশেষজ্ঞকে। আর আমরা হারিয়েছে একজন নিবেদিত প্রাণ জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যিই আজ একটি দুঃখজনক দিন। আমরা সহকর্মী সংসদ সদস্যকে হারিয়েছি। যিনি পেশায় একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।
শেখ হাসিনা ডা. সিরাজুল আকবরের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ১৯৯৬ সালের পর তিনি চারবার মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের পর তৎকালীন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুতে মাগুরার ওই আসনটি শূন্য হলে উপনির্বাচনে ওই সময় ক্ষমতাসীন বিএনপি ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে আসনটি ছিনিয়ে নেয়। এরপর ১৯৯৬’র ১২ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সিরাজুল আকবর ওই আসনে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডা. সিরাজুল আকবর যেমন একজন নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিবিদ ছিলেন তেমনি ছিলেন প্রতিভাবান ও সুদক্ষ শিশু চিকিৎসক। তিনি গরীব, সাধারণ মানুষের শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। দু’বার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন অত্যন্ত সততার ও দক্ষতার সাথে। এক সময় যে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছিল, সেই রেড ক্রিসেন্টের ওপর তিনি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে এনেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি যেমন মাগুরার মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন, তেমনি ছিলেন দলের নেতা-কর্মীদের কাছেও। তিনি দীর্ঘদিন মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার পর, গত ৮ মার্চ সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আইসিসি ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ যখন কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হয়েছে, সমগ্র জাতি যখন আনন্দ আত্মহারা তখন এদেশের শিশুরা একজন চিকিৎসক ও নিবেদিত সেবককে হারিয়েছে। রাজনীতিবিদ হয়েও তিনি চিকিৎসক হিসেবে কখনও দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেননি। ঢাকার শিশু হাসপাতালের উন্নয়ন ও শিশুদের চিকিৎসার যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে ট্যাক্স ফ্রি করার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন।
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেন, মোহাম্মদ সিরাজুল আকবর ছিলেন আর্ত-মানবতার সেবায় নিবেদিত একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি নিষ্ঠার সাঙ্গে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ ধরনের মানুষের মৃত্যু পাহাড় সমান কষ্টের। আর চিকিৎসকের মৃত্যু সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টদায়ক। তাকে হারিয়ে জাতি শোকাহত।