রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম বিকাশ কুমার শাহ বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
মান্নার আইনজীবী এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান তার রিমান্ড বাতিল ও জামিনের আবেদন করেন।
মান্নান খান তার আবেদনে বলেন, মান্না রিমান্ডে থাকাকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। তাই তার রিমান্ড বাতিল ও জামিন প্রয়োজন।
এর আগে, ১১ মার্চ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার ওসি (তদন্ত) ফিরোজ কবির আদালতকে লিখিতভাবে অবহিত করেন, রিমান্ডে থাকাকালে মান্নার বুকে ব্যথা অনুভূত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি সুস্থ হলে পুনরায় আদালতকে জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, ৭ মার্চ গুলশান থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম আতাউল হক ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানায় করা মামলায় মান্নাকে প্রথম দফায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনালাপে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীকে উৎসাহিত করতে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ৫ মার্চ গুলশান থানার এসআই সোহেল রানা বাদী হয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাটি করেন।
গুলশান থানায় ২৪ ফেব্রুয়ারি মামলাটি করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে ধানমণ্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে র্যাব-২ তাকে আটক করা হয় বলে সেসময় জানিয়েছিলেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
গত ২২ ফেব্রুয়ারী ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের অন্যতম উদ্যোক্তা মাহমুদুর রহমান মান্নার ফোনালাপের অডিও টেপ ফাঁস হয়। এতে মান্নাকে চলমান পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপের উদ্যোগে আগ্রহ প্রকাশ করতে শোনা যায়। এই অডিও টেপ ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক নেতা মান্না ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বাদ পড়ার পর বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টক শো-তে সরব ছিলেন।নাগরিক সমাজের হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্বকারী মান্নার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে।
গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোট অবরোধ ডাকার পর সহিংসতায় প্রাণহানির মধ্যে ড. কামাল, মান্নার উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানানো হয়।
সংলাপ না হলে আবারো ওয়ান ইলেভেন হওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কথা উঠলে নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মান্না। ২০১২ সালে আত্মপ্রকাশ করা নাগরিক ঐক্য প্রথমে নাগরিক সংগঠন হিসেবে কাজ শুরু করলেও এটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠছে।
ছাত্রলীগ থেকে জাসদ, বাসদ, জনতা মুক্তি পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে ফেরা মান্না ২০০৭ সালে রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের পর সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান।
সে সময় দুই নেত্রীকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা, যা মাইনাস টু ফর্মুলা হিসেবে পরিচিত, তাতে মান্নার সক্রিয় ভূমিকার কথা বেশ আলোচিত। এজন্য তাকে ওয়ান-ইলেভেনের ‘কুশীলব’ বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।