হাতে গোনে আর মাত্র কয়েকটি ঘণ্টা, এরপরই অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রিকেট ভেন্যু মেলবোর্নে শুরু হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার মহাগুরুত্বপূর্ণ নকআউট পর্বের ম্যাচটি, যা ইতিমধ্যেই রূপ নিয়েছে মহারণে। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে জয়ী দলটি পৌঁছে যাবে সেমিফাইনালে, যেখানে প্রথম দল হিসেবে অবস্থান নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
মেলবোর্নের এই ম্যাচটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের ৩০০তম ম্যাচ। এদিক দিয়ে ম্যাচটির মাধ্যমে একটি মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেই সাথে বিশ্বআসরে বাংলাদেশের জন্য এটি প্রথম কোনো নকআউট পর্বের ম্যাচ। এর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে এই ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ শেষ আটে উঠলেও সেবার সুপার এইটের খেলা ছিল গ্রুপ ভিত্তিক, ফলে প্রতিটি দল অনেকগুলো ম্যাচ খেলতে পেরেছিল।
ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ২৮ বার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত, যেখানে ভারতের ২৪টি জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের জয় ৩টি; অপর ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছিল বৃষ্টির কারণে। বাংলাদেশের জয়ের পরিমাণ নগণ্য হলেও মর্যাদার দিক দিয়ে এর ওজন বেশ ভারী, কারণ ৩টি জয়ের ২টিই ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে ‘কলঙ্কের হার’ হিসেবে স্থান নিয়েছে।
আগামীকাল বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মুখোমুখি হবে দুই দল। স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় টস করতে নামবেন দুই অধিনায়ক নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মহেন্দ্র সিং ধোনী।
অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর বদৌলতে এবার ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচকে ঘিরে। ভিডিও বা মন্তব্যের জের ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে, সেই সাথে একই অঞ্চলের (দক্ষিণ এশিয়া) দেশ হওয়ায় উৎসাহের পালে হাওয়াটাও বেশ জোরালো।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এবারের বিশ্বকাপ খেলতে এসে দারুণ পারফরমেন্স করছে ভারত। গ্রুপ পর্বে ৬টি ম্যাচের সবগুলো ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রেখেছে মহেন্দ্র সিং ধোনীর দল। অপরদিকে দুর্দান্ত ফর্মে আছে বাংলাদেশ দলও, গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের পাশাপাশি শক্তিশালী ইংল্যান্ডকেও পরাজিত করে টাইগাররা, সেই সাথে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি এক ম্যাচ আগেই নকআউট পর্বে বাংলাদেশের জায়গা নিশ্চিত করে দেয়।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দুটি ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত, যেখানে জয়ের পরিমাণ সমান। ২০০৭ সালে পোর্ট অব স্পেনে প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চে দ্বিপক্ষীয় ম্যাচ খেলেছিল দুই দল, যেখানে রাহুল দ্রাবিড়ের ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় করে দিয়েছিল হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে অবশ্য জয় এসেছিল ভারতেরই, যেটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে, মিরপুরে।
২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেই জয় এখনও কাঁদায় ভারতকে। জাতীয় দলের ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানার মৃত্যুর ১ দিন পর, ১৭-ই মার্চ ম্যাচ খেলতে নামে শোকাহত বাংলাদেশ, শোক যেখানে রূপ নিয়েছিল শক্তি হিসেবে। এই মার্চ মাসেই ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিলো বাংলাদেশ। আবারও মার্চে মুখোমুখি দুই দল; পরিসংখ্যানের পাতা বলছে, মার্চ মাসে ভারত কখনও বাংলাদেশকে হারাতে পারেনি।
এই বিষয়টাও বড় টনিক হয়ে কাজ করতে পারে এই ম্যাচে!