বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা ট্রফি ধরে রাখার মিশনে টিকে থাকতে যেভাবে আম্পায়ারদের কাজে লাগালো তা কোনো পাড়া-মহল্লার খেলাতেও হয় না। আম্পায়াররা আসলে ভারতকে জিতিয়েছে বাংলাদেশকে হারাতে পারেনি। তারা হারিয়ে দিয়েছে ক্রিকেটকে। ভারতের জয়টা তাই লজ্জার। হেরেও মাথা উঁচু করে দেশে ফিরবে টাইগাররা। এ ম্যাচে নৈতিক জয় হয়েছে বাংলাদেশেরই।
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ৩০৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৯৩ রানে অলআউট হওয়া মাশরাফির দল ‘হেরে গেছে’ ১০৯ রানে।
উদ্বোধনী জুটিতে ৩৩ রান ওঠার পর জোড়া ধাক্কা প্রথমে অস্বস্তিতে ফেলে বাংলাদেশকে। ২৫ বলে চারটি চারে ২৫ রান করা তামিম ইকবালকে ক্যাচ আউট করেন ভারতীয় পেসার উমেশ যাদব। পরের বলে সৌম্য সরকারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরে যান বিজয়ের পরিবর্তে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া ওপেনার ইমরুল কায়েস (৫)।
দলীয় ৩৩ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ দলকে ভালোভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ সামিকে পুল করতে গিয়ে লং-লেগে শিখর ধাওয়ানের হাতে ধরা পড়েন আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ (২১)। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ক্যাচ নেওয়া ধাওয়ানের পা সীমানার দড়ি ছুঁয়েছিল কি না তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। ২১তম ওভারে আবার সামির আঘাত। শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলা সৌম্য ২৯ রান করে কট বিহাইন্ড।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাকিব আল হাসান। রবীন্দ্র জাদেজাকে কাট করতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে সামির হাতে ধরা পড়া সাকিবের অবদান ৩৩ বলে মাত্র ১০ রান।
এরপর ফিরে যান মুশফিকুর রহিম। ব্যাটিং পাওয়ার প্লের প্রথম বলেই উমেশ যাদবকে তুলে মারতে গিয়ে আকাশে ক্যাচ তুলে আরেক উইকেটরক্ষক ধনির হাতে ক্যাচ দেওয়া মুশফিক করেছেন ২৭ রান। এরপর সাব্বির রহমানের ৩০ ও নাসির হোসেনের ৩৫ রান হারের ব্যবধানই শুধু কমাতে পেরেছে বাংলাদেশের।
এর আগে রোহিত শর্মা আর সুরেশ রায়নার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ৬ উইকেটে ৩০২ রান এনে দিয়েছে ভারতকে। রোহিত ১৩৭ ও রায়না ৬৫ রান করেছেন। ৬৯ রানে তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ।
টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া ভারতের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ৭৫ রান উপহার দেন রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। হতাশায় আক্রান্ত বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেওয়ার কৃতিত্ব সাকিব আল হাসানের। ১৭তম ওভারে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন ৩০ রান করা ধাওয়ানকে।
পরের ওভারেই রুবেল হোসেনের আঘাত। ইংল্যান্ড-বধের অন্যতম নায়কের অফস্টাম্পের একটু বাইরে পিচ পড়া বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন বিরাট কোহলি। নিচু ক্যাচ দারুণ দক্ষতায় গ্লাভসবন্দি করে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন মুশফিকুর রহিম। ভারতের সেরা ব্যাটসম্যানের অবদান মাত্র তিন রান।
২৮তম ওভারের শেষ বলে মাশরাফির দলকে তৃতীয় উইকেট এনে দেন তাসকিন আহমেদ। এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে সাকিবের হাতে ধরা পড়েন রাহানে (১৯)।
১১৫ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর রোহিত-রায়নার ১২২ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া রোহিত অবশ্য ভাগ্যবান। ব্যক্তিগত ৯০ রানে ডিপ মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়েও স্কয়ার লেগ আম্পায়ার আলিম দারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বেঁচে গেছেন। রুবেল হোসেনের ফুল টস বল রোহিতের কোমরের ওপরে ওঠার অভিযোগ টিভি রিপ্লেতে ভুল বলেই মনে হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত রোহিত ফিরেছেন ১২৬ বলে ১৩৭ রান করে। ১৩৭ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংসটা সাজানো ১৪টি চার ও তিনটি ছক্কায়। ৫৭ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় রায়নার অবদান ৬৫ রান। শেষ দিকে রবীন্দ্র জাদেজার ১০ বলে ২৩ রানের ‘ক্যামিও’ ইনিংস ৩০০-র ওপরে নিয়ে গেছে ভারতকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ৫০ ওভারে ৩০২/৬ (রোহিত ১৩৭, ধাওয়ান ৩০, কোহলি ৩, রাহানে ১৯, রায়না ৬৫, ধোনি ৬, জাদেজা ২৩*, অশ্বিন ৩*; তাসকিন ৩/৬৯, রুবেল ১/৫৬, সাকিব ১/৫৮, মাশরাফি ১/৬৯)
বাংলাদেশ : ১৯৩/১০, ওভার ৪৫ (নাসির ৩৫, সাব্বির ৩০, সৌম্য ২৯; যাদব ৪/৩১, সামি ২/৩৭, জাদেজা ২/৪২)
ফল : ভারত ১০৯ রানে জয় নিয়ে সেমিফাইনালে ভারত
ম্যাচ সেরা : রোহিত শর্মা (ভারত)