বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ কি হের গেল নাকি বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়া হল এমন প্রশ্ন করেছেন অনেকে।
প্রশ্ন উঠতে পারে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সততা নিয়ে, প্রশ্ন উঠতে পারে আইসিসির মনোনীত আম্পায়ারদের স্বচ্ছতা নিয়েও। সেই সঙ্গে ভারতকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) হীন মানসিকতা নিয়েও সমালোচনার ঝড় উঠতেই পারে। বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে অন-ফিল্ড আম্পায়ার ও থার্ড আম্পায়াররা যে নগ্ন পক্ষপাত দুষ্টতা দেখিয়েছেন এরপর এমন প্রশ্ন উঠলে তাতে বিন্দুমাত্র বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
ইনিংসের ৪০তম ওভার। সে সময় ৯০ রানে ব্যাট করছিলেন রোহিত। ওই ওভারে চতুর্থ বলটি ফুলটস দিয়েছিলেন রুবেল। বলটিতে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দেন রোহিত। কিন্তু লেগ আম্পায়ার আলিমদার বোলিং প্রান্তে থাকা ইয়ান গোল্ডকে ‘নো’ বলের সঙ্কেত দেন। সাথে সাথে রোহিত শর্মার নিশ্চিত ঐ আউটকে ‘নো বল’ ডেকে বাংলাদেশকে হতাশ করেছেন ইংলিশ আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড।
কমেন্ট্রি বক্সে বসে কিংবদন্তি লেগ-স্পিনার শেন ওয়ার্ন আলিম দারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেন। এটি স্পষ্টতই আউট ছিল না জানিয়ে ওয়ার্ন বলেন, ‘এটা নো বল ছিল না। খুবই বাজে সিদ্ধান্ত।’
টুইট করে বাংলাদেশি ক্রিকেটেরদের পাশেই দাঁড়ান ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণ। তিনিও জানান যে ওটি নো বল নয়, একটি বৈধ ডেলিভারি ছিল।
টুইট করেন বলিউড অভিনেতা অর্জুন রামপাল। সেখানে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই ভুল।’
টুইটারে তিনি লিখেন, ‘৩০২ রান ভালো স্কোর। বাংলাদেশও যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে। দুভার্গ্যজনকভাবে দুইটি সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এবার ভারতের উচিৎ ভালো বোলিং করা।’
এর পর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠেছে। দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র রিপোর্টার দেবব্রত মুখোপাধ্যায় তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “কাল রাতেই বলছিলাম, ‘ভারতকে জেতানোর চেষ্টা হয়তো বাজিকররা করবে না। তবে ওরা যাতে না হারে, সে জন্য আইসিসির প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে পিয়ন, সবাই জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করবে। তা-ই করছে। ১১টা ছেলে এক বিভৎস অসম লড়াই লড়ছে।”
এ বিষয়ে চুপ থাকতে পারেননি বাংলাদেশের নাট্য নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকি। তিনি লিখেছেন, “দুঃখজনক ভাবে বলছি, আইসিসিকে এই মুহূর্তে খুব ঘৃণ্য মনে হচ্ছে। নিশ্চিত নির্লজ্জ একটি ব্যাপার। ….. বাংলাদেশ বিশ্বকাপে অঘটনের শিকার….।”
দৈনিক সকালের খবরের উপ-ক্রীড়া সম্পাদক আরিফুর রহমান বাবু তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ইংরেজরা এখন ভারতের চামচা হয়ে গেছে। এটা কি নো বল?’
গাজী টিভির ক্রীড়া প্রতিবেদক মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড থেকে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এটা যদি নো বল হয় তাহলে আমার সাংবাদিকতাই ছেড়ে দেয়া উচিত। ডেফিনেটলি ইটস নট এ নো বল। ইউ নো ওয়াট! ইটস এ ক্রাইম।’
চ্যানেল টুয়েন্টিফোর -এর প্রতিবেদক শোয়েব তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৩ জন খেলছে।’
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের এই ম্যাচটিতে আম্পায়ারদের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের শিকার হতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
দিনের শুরুতে টস ভাগ্য বাংলাদেশের বিপরীতে গেছে। বাংলাদেশের রিভিউর আগে তা আউটের সিদ্ধান্ত দিলেও দিতে পারতেন তিনি। এরপর ভারতের ব্যাটিং ইনিংস চলাকালে রুবেলের নো বল ছাড়া আরও একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়ে বাংলাদেশের উজ্জীবিত ক্রিকেটে পানি ঢেলেছেন আম্পায়াররা। মাশরাফির বলে সুরেশ রায়নার এলবিডব্লিউর একটি সিদ্ধান্তও নাকচ করে দেন ইয়ান গোল্ড। মাশরাফি রিভিউ কল করলে আউটের সমূহ সম্ভবনা থাকা সত্ত্বেও বাতিল করে দেন টিভি আম্পায়ার স্টিভ ডেভিস।
পরবর্তীতে বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসে পর পর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিপক্ষে দেওয়া হয়েছে এক বিতর্কিত আউটের সিদ্ধান্ত।
এবার আসা যাক শুরুতে কেন ভারতীয় ক্রিকেটারদের সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস চলাকালে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট ছুঁয়ে বাতাসে ভাসা বলটি বাউন্ডারি সীমানায় দ্বিতীয় চেষ্টায় তালুবন্দী করেন ধাওয়ান। কিন্তু নিশ্চিত ছয় হওয়া বলটি তিনি যখন তালুবন্দী করেছেন তখন তার পা বাউন্ডারি লাইন স্পর্শ করেছিল। কিন্তু থার্ড আম্পায়ার তা উপেক্ষা করেই মাহমুদউল্লাহকে আউট ঘোষণা করেছেন।
যদিও টিভি রিপ্লেতে এবং স্টিল ফটোগ্রাফিতে স্পষ্টই দেখা গেছে ধাওয়ানের পা লাইন স্পর্শ করেছে। যারা এই আউটের সিদ্ধান্তকে সাপোর্ট করেছেন তাদের দাবি বাউন্ডারি লাইন ও ধাওয়ানের পা’র মধ্যে ইঞ্চি খানেক ফাঁক ছিল।
আইসিসির মূল আয়ের ৮০ শতাংশ ভারতের অবদান। এ কথা ক্রিকেট বিশ্বে সর্বজন স্বীকৃত ‘ওপেন সিক্রেট’। যে কোনো আসরে ভারতের টিকে থাকা মানে আইসিসির লাভের অ্যাকাউন্ট ফুলে ফেঁপে ওঠা।
মাশরাফিদের উদ্দীপ্ত ক্রিকেটের জোয়ারে মহেন্দ্র সিং ধোনিদের অস্তিত্ব যেন বিলীন হয়ে না যায়, কে জানে হয়তো সে কারণেই আম্পায়ারদের নির্দেশনা দিয়েই মাঠে ঠেলেছে ক্রিকেটের বিশ্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। যাকে নিয়ে অনেকেই মজা করে বলে থাকেন-আইসিসি মানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল নয়, ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল!
সে যাই হোক, বৃহস্পতিবার ১৬ কোটি বাংলাদেশীর মন ভেঙ্গে দিয়েছে আম্পায়ারদের বিতর্কিত আচরণ। যার ছবি ফুটে উঠেছে ফেসবুক ও টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে।
উল্লেখ্য, ম্যাচের দুই অন ফিল্ড আম্পায়ারের একজন পাকিস্তানের আলিম দার, অন্যজন ইংল্যান্ডের ইয়ান গোল্ড। থার্ড আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ডেভিস। আর চতুর্থ আম্পায়ার হিসেবে থাকছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক তারকা ক্রিকেটার পল রাইফেল।