ভারতের শিরোপা ধরে রাখার আশা শেষ। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পাত্তাই পায়নি ‘টিম ইন্ডিয়া’। অস্ট্রেলিয়া ঝড়ে করুন বিদায় হলো ভারতের।
বিখ্যাত সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ৯৫ রানে জিতে ফাইনালে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। আগামী রোববার মেলবোর্নের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড।
৩২৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই হয়েছিল ভারতের। তবে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফাইনালের পথে এগিয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। এ প্রতিবেদন লেখার সময় ৪৫ ওভারে ভারতের স্কোর ২৩২/৭। হাতে তিন উইকেট নিয়ে বাকি ৩০ বলে ভারতকে আরও ৯৭ রান করতে হবে।
মিচেল স্টার্কের করা প্রথম ওভারে স্লিপে ক্যাচ দিয়েও শেন ওয়াটসনের ব্যর্থতায় বেঁচে যান রোহিত। তখনো রান করতে পারেননি তিনি। চতুর্থ ওভারে জশ হেজেলউডের বল শিখর ধাওয়ানের ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছনে গেলেও ক্যাচটা ধরতে পারেননি উইকেটরক্ষক ব্র্যাড হ্যাডিন। ধাওয়ানের রান তখন ৫।
শেষ পর্যন্ত এই বাঁহাতি ওপেনারকে ফিরিয়েছেন হেজেলউডই, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ক্যাচ বানিয়ে। ৪১ বলে ৪৫ করা ধাওয়ানের বিদায়ে ভেঙে যায় ৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। দলীয় সংগ্রহে দুই রান যোগ হওয়ার পর আবার ভারতের জন্য ধাক্কা, মিচেল জনসনকে তুলে মারতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন বিরাট কোহলি (১)। সহজ ক্যাচটা ধরতে সমস্যা হয়নি হ্যাডিনের।
দলীয় ৯১ রানে ফিরে আসেন রোহিত। আগের বলে জনসনকে ছক্কা মেরেছিলেন। তবে পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান বাংলাদেশের বিপক্ষে ‘বিতর্কিত’ সিদ্ধান্তে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়ে সেঞ্চুরি করা রোহিত। সেমিফাইনালে তাঁর অবদান ৩৪ রান।
২৩তম ওভারে আবার ধাক্কা। জেমস ফকনারের বলে সুরেশ রায়নার (৭) ক্যাচ দারুণ দক্ষতায় গ্লাভসবন্দি করেন হ্যাডিন।
১০৮ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের পর অজিঙ্কা রাহানেকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে আস্কিং রান রেট লাফিয়ে-লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়ে যায় ভারত।
৩৭তম ওভারে স্টার্কের বলে রাহানের (৪৪) কট বিহাইন্ড এবং ৪২তম ওভারে স্মিভেন স্মিথের সরাসরি থ্রোয়ে রবীন্দ্র জাদেজার (১৬) রান আউট ‘টিম ইন্ডিয়া’র বিপদ বাড়িয়ে দেয় আরও। ‘আশার প্রদীপ’ হয়ে জ্বলছিলেন অধিনায়ক ধোনি। কিন্তু গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের দুর্দান্ত থ্রো ধোনিকে (৬৫) রান আউট করে দিলে ভারতের হার নিশ্চিত হয়ে যায়।
এর আগে স্টিভেন স্মিথ আর অ্যারন ফিঞ্চের দৃঢ়তায় ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২৮ রান করে অস্ট্রেলিয়া। আগের তিন ইনিংসে স্মিথের স্কোর ছিল ৬৫, ৭২ ও ৯৫। বিশ্বকাপে ভালো খেলছিলেন, কিন্তু সেঞ্চুরির দেখা পাচ্ছিলেন না কিছুতেই। অবশেষে ক্রিকেটের সেরা আসরে শতক না পাওয়ার আক্ষেপ ঘুচল স্মিথের, স্পর্শ করলেন তিন অঙ্ক।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। ম্যাচের চতুর্থ ও নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকদের ধাক্কা দেন উমেশ যাদব। একটি করে চার ও ছক্কা মেরে বড় কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। কিন্তু মাত্র ১২ রান করে যাদবের বলে বিরাট কোহলিকে ক্যাচ দেন তিনি।
তবে ১৫ রানে উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যাওয়ার ধাক্কা দলকে বুঝতেই দেননি স্মিথ আর ফিঞ্চ। শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন দুজনে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে স্মিথ-ফিঞ্চের অবদান ১৮২ রান।
শতকের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি স্মিথ। যাদবকে তুলে মারতে গিয়ে রোহিত শর্মাকে ক্যাচ দেন তিনি। ৯৩ বলে খেলা ১০৫ রানের চমৎকার ইনিংসটা সাজানো ১১টি চার ও দুটি ছক্কায়।
স্মিথের বিদায়ের পরই ছন্দপতন হয় অস্ট্রেলিয়ার। মাত্র ১৬ রানের ব্যবধানে ফিরে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (২৩), ফিঞ্চ (৮১) এবং অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক (১০)। ফিঞ্চের ১১৬ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও একটি ছক্কা।
৪৩তম ওভারে ক্লার্কের বিদায়ে স্কোর দাঁড়ায় ২৪৮/৫। এরপর জেমস ফকনার (২১), শেন ওয়াটসন (২৮) আর মিচেল জনসনের (৯ বলে অপরাজিত ২৭) তিনটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস সোয়া তিন শ রানের ওপরে নিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়াকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
অস্ট্রেলিয়া : ৫০ ওভারে ৩২৮/৭ (ফিঞ্চ ৮১, ওয়ার্নার ১২, স্মিথ ১০৫, ম্যাক্সওয়েল ২৩, ওয়াটসন ২৮, ক্লার্ক ১০, ফকনার ২১, হ্যাডিন ৭*, জনসন ২৭*; যাদব ৪/৭২, মোহিত ২/৭৫, অশ্বিন ১/৪২)।