ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে মনোনয়নপত্র কিনলেও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরীর নির্বাচনে অংশ নেয়া এখনও অনিশ্চিত। দলীয় সমর্থন না থাকায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে লড়বেন কী না এ নিয়ে সংশয়ে আছেন তিনি নিজেই। দল থেকে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হককে সমর্থন দেয়া হলেও তাকে চেনেন না বলে সাফ জানিয়েছেন দিয়েছেন কবরী। মন্ত্রীত্ব না পাওয়ার আক্ষেপ থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন বলেও জানান তিনি।
গত ২৪ মার্চ ঢাকা উত্তর সিটি করপোশনের মনোনয়নপত্র কেনেন কবরী। পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে নির্বাচন করার ইচ্ছার কথা জানান তিনি। তবে শেখ হাসিনা তাকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর আগেই আনিসুল হককে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেন আওয়ামীলীগ সভাপতি।
দলীয় সমর্থন না থাকা সত্ত্বেও মনোনয়ন কেনা প্রসঙ্গে কবরী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ করেছি। স্বাধীন হওয়ার পরে দল থেকে কিছু পাইনি। খুব কষ্ট করে একবার সংসদ সদস্য হয়েছি। ইচ্ছে ছিলো পরে মন্ত্রী হব। প্রধানমন্ত্রী চাইলে আমাকে মন্ত্রী বানাতে পারতেন। তখন স্বাধীনভাবে কিছু করতে পারতাম। সে সুযোগটা আর পাইনি। তাই এখন মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকে মেয়র হতে চাই।”
আনিসুল হককে দলীয় সমর্থন দেয়ার বিষয়ে অভিযোগ করে কবরী বলেন, “আনিসুল হককে আমি চিনি না। যাকে চিনি না, তার ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। তিনি কোনোদিন রাজনীতি করেননি। তারা ব্যবসায়ী। ব্যবসা করে সুবিধা নিয়েছেন। কোনোদিন সমাজসেবা করতেও তাকে দেখা যায়নি। তারা কুইক রেন্টাল পেয়েছেন, খাল ভরাট করে হাইরাইজ বিল্ডিং বানিয়েছেন, গার্মেন্টের মালিক হয়ে শ্রমিকদের কম বেতন দিয়ে ঠকিয়েছেন। তিনি একবারও নির্বাচন করার বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেননি। আমি তাকে চিনি না।”
অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। আনিসুল হকের প্রতি ইঙ্গিত করে কবরী বলেন, “তিনি কৈ এর তেল দিয়ে কৈ ভাজবেন। রাষ্ট্রের সেবা নিয়ে টাকার মালিক হয়েছেন। আসলে রাজনীতির ভেতরেও রাজনীতি আছে। আমরা তো কালো টাকার মালিকদের সঙ্গে পারব না। আমাদের কোনো দুর্নীতি নেই। কিন্তু আনিসুল হকরা কখনোই মানুষের জন্য কিছু করেননি। আমি দলের বাইরেও মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছি। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি।”
তাহলে কী আনিসুল হককে দলীয় সমর্থন দেয়া ভুল হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান কবরী। একটু কৌশলী উত্তরে বললেন, “তিনি তো আমার মতো পরীক্ষিত না। কখনো দলের জন্য কোনো পরীক্ষা তাকে দিতে হয়নি। তবুও কেন তাকে সমর্থন দেয়া হলো, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।”
শেখ হাসিনার সমর্থন না পেলেও নির্বাচন করবেন কী না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে কবরী বলেন, “এতো স্পর্ধা আমার নেই। আমি স্মার্ট নারী। তবে নেত্রী আমাকে মানা করবেন বলে মনে হয় না। খানিকটা ‘সংশয়’ নিয়ে বলেন, “দেখি, নেত্রী (শেখ হাসিনা) কী বলেন। তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসার অপেক্ষায় আছি। আমার ব্যাপারে সিনিয়র নেতারা অনেক উৎসাহী। তারা আমাকে দেখতে চান। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই। যেহেতু এটা স্থানীয় নির্বাচন। আমি মনে করি, নির্বাচনে দাঁড়ালেও কোনো সমস্যা নেই। এখন নেত্রী বললেই আর কোনো বাধা নেই।”
দল চাইলে তিনি আনিসুল হককে সমর্থন দেবেন কি না, এ বিষয়েও কোনো মন্তব্য করেননি কবরী। তবে তার ‘ক্ষোভ’ অনেক। তিনি বলেন, “আমি নির্বাচনে পাস করলেও আ.লীগের, ফেল করলেও আ.লীগের। কিন্তু আনিসুল হকরা যে কোনো সময় পাল্টে যেতে পারে। সমর্থন দেবো কি না, এটা পরে দেখা যাবে। এখনই কিছু বলতে পারছি না।”
নির্বাচনের জন্য ভালো প্রস্তুতি আছে বলেও জানান কবরী। তিনি নির্বাচিত হলে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে বলে মনে করেন। এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমি মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকা সিটিতে প্রথম নারী মেয়র হিসেবে ইতিহাস গড়তে পারবো। এটা অনেক নারীর জন্য পথ প্রদর্শকের মতো অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। নারী ক্ষমতায়ন এভাবেই দিন দিন বাড়বে।”
তবে সব শেষে মেয়র হন বা না হন, মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন কবরী। নিউজবাংলাদেশ খবর।