হজ নিয়ে মন্তব্যের কারণে মন্ত্রিসভা থেকে সদ্য অপসারিত দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কৃত আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেপ্তার দাবিতে সারা দেশে সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছে ঢিলেঢালাভাবে, যে কর্মসূচিতে জামায়াতও সমর্থন দিয়েছে।
রোববার সকাল ৬টায় হরতাল শুরুর পর রাজধানীর কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। দুই একটি স্থানে মিছিলের চেষ্টা হলেও হরতালকারীদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি ঢাকায়।
সকালের শুরুতে রাজধানীর রাজপথে গণপরিবহনের সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে। অটোরিকশা ও রিকশা চলছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই।
কোনো গোলযোগ না থাকলেও হরতালের কারণে সতর্কতা হিসাবে এবং যাত্রী কম থাকায় দূর পাল্লার বাস ছাড়ছেন না মালিকরা। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে। হরতালের আগের দিন সন্ধ্যা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করতে রাজধানীতে বিজিবিও নামানো হয়।
সকালে মিরপুরের পল্লবী ও পুরান ঢাকার দুই একটি স্থানে হরতালের সমর্থনে মিছিলের চেষ্টা করে ইসলামী দলগুলো কর্মীরা। তবে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ জিয়াউজ্জামান জানান, সকাল ৭টার দিকে মিরপুর সাড়ে এগারো এলাকায় মিছিল বের করলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই সটকে পড়ে হরতাল সমর্থনকারীরা।
রাজধানীর বংশালেও হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে সম্মিলিত ইসলামী দল। তবে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
পল্টন এলাকায় দায়িত্ব পালনরত পুলিশ পরিদর্শক তাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা সতর্ক রয়েছি। এই এলাকায় যান চলাচলও মোটামুটি স্বাভাবিক। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।”
গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, তিনি হজ ও তাবলিগ জামাতের ঘোর বিরোধী। এতে শ্রমশক্তি ও অর্থের ‘অপচয়’ হয়।
তার ওই বক্তব্য ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে আলোচনার ঝড় তোলে। বিভিন্ন জেলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে কয়েক ডজন মামলা হয়, আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে।
এই পরিস্থিতিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা লতিফ সিদ্দিকীকে প্রথমে মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলি থেকে অপসারণ এবং পরে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
লতিফকে গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রথমে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ। এরপর সময় দেওয়া হয় ২২ অক্টোবর পর্যন্ত।
কলকাতায় অবস্থানরত লতিফ ওই সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার না হওয়ায় ২২ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে হরতালের ঘোষণা দেন জোটের মহাসচিব মোহাম্মদ জাফরউল্লাহ খান।
এই কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসলামবিরোধী লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তির দাবিতে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ। জনগণ তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়।”