প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “র্যাব এখন প্রকৃত অর্থেই এলিট ফোর্স। র্যাবকে আরও আধুনিক ও সময়োপযোগী করতে যা যা প্রয়োজন আমরা তার সবকিছুই করব।”
র্যাবের একাদশতম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার র্যাব ফোর্স সদর দফতরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
র্যাবের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “র্যাবের কার্যক্রমে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ এ বাহিনীর নতুন নতুন ব্যাটালিয়ন উদ্বোধন করা হয়েছে। ১১টি র্যাব ব্যাটালিয়নকে স্থায়ী জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।”
গাজীপুরে র্যাবের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য স্থায়ী জায়গা দেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তাঁর সরকারের সময়ে র্যাবের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, বাহিনীটির আরো দুটি নতুন ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকা ও সুন্দরবন এলাকার নিরাপত্তা রক্ষায় র্যাবের আওতা বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধীকে গ্রেফতার করতে র্যাবকে হাই-টেক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “র্যাবের অপারেশনাল শক্তি বৃদ্ধি করতে দুইটি হেলিকপ্টারসহ প্রয়োজনীয় যানবাহন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধীকে গ্রেফতার করতে হাইটেক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করা হয়েছে।”
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে এবং এ বছরের প্রথম থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের সময় জনগণের জানমাল রক্ষায় র্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে যে আন্দোলন বিএনপি-জামায়াত জোট করে যাচ্ছে সেটা তো আন্দোলন না। মনে হচ্ছে যেন বাংলাদেশের অগ্রগতি রোধ করবার জন্য, একটা জিঘাংসা চরিতার্থ করবার জন্য, মানুষের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া, মানুষকে পুড়িয়ে মারা, মানুষের ক্ষতি করা। এভাবে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে যারা মারতে পারে, তারা কখনো দেশের কল্যাণ চাইতে পারে না। মানুষের কল্যাণ চাইতে পারে না। কাজেই কোনোমতেই এটা বরদাস্ত করা যাবে না। এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা যা যা নেবার সকলকেই তা নিতে হবে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে।’
এ সময় দেশে জঙ্গিবাদ দমনে র্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা তাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এবং অসংখ্য জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এর ফলে জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা এখন সীমিত, এ ব্যাপারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। কোনো মতেই বাংলাদেশে আমরা জঙ্গি তৎপরতা চালাতে দেব না। বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ।’
সংবাদপত্রের প্রসঙ্গ তেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অপহরণের সংবাদ বড় করে ছাপা হয় কিন্তু উদ্ধারের সংবাদ গুরুত্ব পায় না। সংবাদপত্রের এই অবস্থান বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যের।”
শেখ হাসিনা বলেন, “ব্যাপক সংখ্যক অপহৃত ব্যক্তিকে র্যাব তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু সেই সংবাদ খুব বেশি পত্রিকায় দেখা যায়নি।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “অপহরণ হলে যতোটা দেখা যায়, উদ্ধারের পর খবরটা বেশি নেয়া হয় না। জানি না, এটা সাংবাদিকতার দুর্বলতা নাকি সংবাদের গুরুত্ব কোনটাকে দিতে হবে। মানে অপরাধটাকে যতোটা গুরুত্ব দেওয়া হয়, অপরাধী যখন ধরা পড়ে বা সেটাকে যখন শোধন করা হয়- সেটার গুরুত্ব একটু কমই পাওয়া যায়। সেটা আমাদের দেশের জন্য দুর্ভাগ্য।”
পরে প্রধানমন্ত্রী র্যাবের ছয়টি ইউনিটের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন এবং দুটি ইউনিট ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২০০৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পুলিশের এই এলিট ফোর্স এ বছর ১১ বছর পার করে ১২ বছরে পা দিল।