হরতাল নেই, রবিবার বিক্ষোভ

হরতাল নেই, তবে সারাদেশে চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ২০ দলীয় জোট। একইসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ নিখোঁজ নেতাকর্মীদের সন্ধান দাবিতে রবিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

শনিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু। প্রথম পাঠানো এ বিবৃতিতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির বিষয় উল্লেখ ছিল না।

পরে শুধু অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে একটি সংশোধনী বিবৃতি পাঠান তিনি।

অনির্দিষ্টকালের অবরোধের পাশাপাশি দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচি পালন করে আসছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। গত মঙ্গলবার থেকে সে ঘোষণা থেকে প্রথমবারের মতো ‘সরে আসল’ ২০ দল। শনিবারের বিবৃতিতেও হরতালের নতুন কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গ্রেফতারের পর বিএনপির অন্যতম যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ সারাদেশে বিরোধী দলীয় গুমকৃত নেতা-কর্মীদেরকে সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় তাদের পরিবারের নিকট ফেরত দেয়ার দাবিতে এবং নেতা-কর্মীদের হত্যা ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে রবিবার দেশব্যাপী সকল জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও সকল মহানগরের থানায় থানায় ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে চলমান অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।’

বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে বিক্ষোভ মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে ২০ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

বরকত উল্লাহ বুলু আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে প্রহসনের একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গায়ের জোরে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে মানুষের বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণসহ জনগণের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন চালানোর পাশাপাশি গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা কেড়ে নিয়ে দেশে এক ভয়াবহ নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশ-মিছিল করা সাংবিধানিক অধিকার হলেও তা পুরোপুরিভাবে নস্যাৎ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের অবৈধ কর্মকাণ্ড ও লুটতরাজের বিরুদ্ধে বিরোধীদলগুলো যাতে সোচ্চার হতে না পারে সে জন্যই ক্ষমতাসীনরা বিরোধীদলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে বানোয়াট মামলা দিয়ে তাদেরকে জেলে পুরে রেখেছে। যৌথবাহিনী দিয়ে দেশে চালানো হচ্ছে গ্রেফতার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে হত্যার নারকীয় ঘটনা। সব মিলিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে যাচ্ছে।’

খালেদা জিয়ার ৮১ দিনের আন্দোলন ব্যর্থ- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বুলু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে সবিনয়ে বলতে চাই, আপনার দলীয় লোকদের দিয়ে সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভরতা ছেড়ে জনগণের কাতারে দাঁড়ান। দেখতে পাবেন ৮১ দিনের আন্দোলন সফল না বিফল। জনগণের দাবি অনুযায়ী নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিলেই জনগণ আন্দোলনে সফল না বিফল হয়েছে তা পরিষ্কার করে দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের সবকটিতে বিপুল বিজয় নিশ্চিত করে আপনার সরকারের অপশাসনের সমুচিত জবাব দিতে জনগণ যেমন ভুল করেনি, ঠিক একইভাবে আগামীতেও জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের বিজয় নিশ্চিত করবে ইনশাআল্লাহ।’

গত ৫ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান অবরোধের পাশাপাশি হরতাল আহ্বান করা হয়।

গত দুই মাসের বেশি সময় সাপ্তাহিক ছুটি, জাতীয় দিবস ছাড়া প্রতি কর্মদিবসেই হরতাল পালন করে আসছিল ২০ দলীয় জোট।