ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আলোচিত মেয়র প্রার্থী হেলেনা জাহাঙ্গীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও গতকাল শেষ দিনেও জমা দিলেন না তা। সরে দাঁড়ালেন নির্বাচন থেকে। তবে মেয়র প্রার্থী আনিসুল হকের প্রতি তার সমর্থন দিলেন।
রবিবার রাতে এমনটি জানান তিলত্তমা ঢাকা গড়াতে প্রত্যয়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর।
কিন্তু কেন সরে অাসলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রবিবার বেলা ৩টার দিকে রিটার্নিং অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার উদ্দেশে বের হওয়ার সময় হঠাৎ শ্বশুর অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই। গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে তার শ্বশুর জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান হেলেনা।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় পরিবারের সবারই মন ভারাক্রান্ত। নিজেও হাসপাতাল থেকে রাত নয়টার দিকে বাসায় ফিরেছেন। যার কারণে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রার্থী হতে না পারলেও ঢাকাবাসীর সঙ্গে এবং মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন হেলেনা। তিনি বলেন, অামি প্রার্থী হতে না পারলেও অামার পুরোপুরি সমর্থন থাকবে আনিসুল হকের প্রতি। এখন তার হয়ে বেশি বেশি কাজ করতে পারবেন বলে জানান হেলানা জাহাঙ্গীর।
রবিবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
নিচে হুবহু তার স্ট্যাটাস তুলে ধরা হল: ‘নিরন্তর শুভেচ্ছা। আপনার নিশ্চয়ই জানেন, আমি একজন রাজনীতির বাইরের মানুষ। পুরোমাত্রায় ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তা আমি। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছি অনেকদিন। আপনাদের অনেকের মতোন আমিও এই ঢাকা শহরের বাসিন্দা। এই শহরেই আমার বড় হওয়া। ঢাকা আমার প্রাণের শহর, প্রিয় শহর। ভালোলাগা আর ভালোবাসার শহর। আমার সুখ-দুখের সঙ্গী এই ঢাকা। সেই ভালোলাগা থেকে, একটি ইতবাচক পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে, ঢাকার পুরনো চেহারা বদলে একটি আধুনিক ঢাকায় রূপ দিতে, ঢাকা উত্তর থেকে এবারের ডিসিসি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম আমি। সে অনুযায়ী মনোনয়নপত্রও নিয়েছিলাম। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ব্যাপক সাড়াও পেয়েছিলাম। ভাই, বোন, বন্ধু, আত্মীয়, স্বজন- যে যার মতো করে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন আমার। নির্বাচনকে ঘিরে চেনা, না চেনা অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা আমার জীবনের পরম প্রাপ্তি। নির্বাচনে অংশগ্রহণের সব প্রস্তুতি যখন সম্পন্ন, ঠিক তখন আমার এবং আমার পরিবারের জন্য একটি খবর বেদনার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার শ্বশুড় গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে এখন ভর্তি। তিনি এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। লাইভ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। এ ঘটনায় আমার এবং আমার পরিবারের সবারই মন ভারাক্রান্ত । এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাই, বোন, বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের অনেকের সঙ্গে এ নিয়ে পরামর্শ করেছি। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সবাই এই মুহূর্তে মেয়র নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমিও তাদের এই মতামত মেনে নিয়েছি। তাই সব প্রস্তুতি নিয়েও শেষ মুহূর্তে এসে আমি মনোনয়নপত্র জমা না দিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আগেও বলেছি, নির্বাচিত হলেও মানুষের পাশে থাকবো। না হলেও মানুষের পাশে থাকবো। নির্বাচন না করলেও আমি প্রিয় ঢাকাবাসীসহ সাধারণ মানুষের পাশে থাকবো আমার সাধ্যমতো। এ আমার অঙ্গীকার। আমি নিশ্চিত এবার মাঠে ভোটের লড়াইয়ে দেখা না হলেও, কোনো না কোনও এক সময় আবার দেখা হবে, আগামীর পথে, কোনও এক শুভ দিনে। আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থনই হবে আমার সেই পথ চলায় সঙ্গী।’