চলমান ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ক্লাস শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে শ্রেণী অনুসারে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উপস্থিতি-অনুপস্থিতির তথ্য নিজস্ব ওয়েবসাইটে আপলোড করা বাদ্ধতামুলক করতে যাচ্ছে সরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক খসড়া পরিপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরি ও হালনাগাদের জন্য এ খসড়া পরিপত্রটি প্রস্তুত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে এটি চূড়ান্ত করা হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখা-শেখানো অধিকতর ফলপ্রসূ করার জন্য ওয়েবসাইট প্রয়োজন। এ ছাড়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ওয়েবসাইট থাকা আবশ্যক বলে খসড়া পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
যে সব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট নেই তাদের ওয়েবসাইট তৈরী করে এর ঠিকানা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে উল্লেখ করে পরিপত্রে বলা হয়েছে, যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই সেখানে স্থানীয় জেলা পরিষদ/উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরী এবং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ব্যয় সরকারের বিধি মোতাবেক নিজস্ব তহবিল থেকে নির্বাহ করতে পারবে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলাদা অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওয়েবসাইট তৈরী করবে।
পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, ওয়েবসাইটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তথ্য ও ছবি যেমন- প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি ও ইতিহাস, শিক্ষার্থীদের তথ্য, শিক্ষকদের তথ্য, কনটেন্ট, ভূমির তফসিল, ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য, ভবন, কক্ষ সংখ্যা, বিভিন্ন শ্রেণীতে ছাত্রছাত্রীর আসন সংখ্যা, যানবাহনসহ অন্যান্য তথ্যাদি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও কম্পিউটার ল্যাব সংক্রান্ত তথ্য, কম্পিউটার ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য, পরিচ্ছন্নতা, শরীর চর্চা ও স্যানিটেশন সংক্রান্ত তথ্য, পঠিত বিষয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য, স্মরনিকা, অনুমোদিত ও পূরণকৃত পদের তথ্য, বিগত তিন বছরের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সংক্রান্ত তথ্য, ম্যানেজিং কমিটির তথ্য, প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত আইন, বিধি, নীতিমালা সার্কুলার, খেলার মাঠ সংক্রান্ত তথ্য, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং বিভিন্ন সফলতার তথ্য ও ছবি গ্যালারি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
‘ছাত্রীদের তথ্যাবলী শুধুমাত্র শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা দেখতে পারবেন। এ জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।’
ওয়েবসাইটে বিভিন্ন সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে যেমন- ক্লাস রুটিন, একাডেমিক ক্যালেন্ডার, বাৎসরিক ছুটির তালিকা, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফলাফল, জরুরি নোটিশ, ছাড়পত্র (টিসি), প্রসংশাপত্র, শিক্ষার্থী সম্পর্কিত সকল প্রকার রিপোর্ট, প্রতিষ্ঠানের এ্যাকাউন্টস তথ্য প্রত্যাহিত কালেকশন, খরচ, স্টেটমেন্টসহ সকল প্রকার হিসাব ব্যবস্থাপনা, ইংলিশ ফর টুডের লিসেনিং টেক্সট, ইলেকট্রনিক ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়াল, ই-বুক ইত্যাদি। এ ছাড়া নতুন নতুন সেবা অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চলমান থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে খসড়ায়।
‘ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করা ও সমস্যার উদ্ভব হলে সমাধানসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য কম্পিউটার ও কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন জনবল না থাকলে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে এ কাজ চালাতে হবে। সম্ভব হলে প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়মিতভাবে ওয়েবসাইট হালনাগাদের কাজ করতে হবে।’
খসড়া পরিপত্রে এ ছাড়া জানানো হয়েছে, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজাররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হালনাগাদ আছে কিনা ও তাতে যথাযথ তথ্য সন্নিবেশিত আছে কিনা, তা নিয়মিত তদারকি করবেন। তারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। জেলা শিক্ষা অফিসার জেলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট তৈরি ও হালনাগাদের অগ্রগতি প্রতিবেদন তিন মাস অন্তর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে পাঠাবেন।
জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কমিটি সভায় বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি/সার্বিক) বিষয়টি মনিটর করবেন।