বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড ও আলিম দারের পক্ষপাতিত্ব সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো ক্রিকেটবিশ্বে বিতর্কের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ম্যাচে ভারত ৩০৩ রানের টার্গেট দিলেও মূলত দুই আম্পায়ারের সহযোগিতায় ধোনিরা জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল।
ক্রিকেটে বাংলাদেশে ভারতীয় ভক্তের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে পক্ষপাতিত্ব আম্পায়ারিংকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ এতটা তীব্র আকার ধারণ করে যে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন দিয়েছিল। বিশ্বকাপ থেকে ভারত বিদায় নেওয়ার পর ঢাকাসহ অন্যান্য জেলাতেও বিজয় মিছিল বের হয়েছে।
এই ক্ষোভ হয়তবা বেশিদিন থাকত না। কিন্তু ফাইনালে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে আইসিসি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালকে না দেখে ক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। আইসিসির গঠনতন্ত্রে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা আছে বিশ্বকাপ ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেবেন আইসিসি সভাপতি।
১৯৯২ সালে লাহোরে বিশ্বকাপ ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গার হাতে ট্রফি তুলে দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। তবে আইসিসির কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই বেনজির ভুট্টো পুরস্কার বিতরণ করেন। সেই ঘটনা আর মেলবোর্নের ফাইনাল এক নয়।
সত্যি বলতে কি কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারের সমালোচনা করাতে মুস্তফা কামালের ওপর বিশ্ব ক্রিকেটে অনেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারণ তাদের মোট ছিল, মাঠে যায় ঘটুক না কেন আইসিসির সভাপতি হিসেবে তার মন্তব্য করা ঠিক হয়নি।
কিন্তু মেলবোর্ন ফাইনালে শ্রীনিবাসন যা করলেন তাতে এখন উল্টো মুস্তফা কামালের প্রতি সহানুভূতি জাগছে। স্বয়ং আইসিসির নির্বাহী কমিটির অনেকে শ্রীনিবাসনের ট্রফি বিতরণ করাটা মেনে নিতে পারছেন না। তাদের কথা কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারের সমালোচনা করায় নির্বাহী কমিটিতে নিন্দা জানানো যেত। কিন্তু এটাও ঠিক যে আইসিসির কোথাও লেখা নেই আম্পায়ারের সমালোচনা করা মানে সংস্থার গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করা। কিন্তু মেলবোর্ন ফাইনালে শ্রীনিবাসন যা করলেন তাতো পুরোপুরি গঠনতন্ত্রের বিরোধী।
এখন আইসিসি সভাপতি যে মামলার কথা বলছেন তা তিনি করতে পারেন। কারণ বেআইনিভাবে তাকে পুরস্কার বিতরণ করতে দেওয়া হয়নি। শ্রীনিবাসন যখন এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিলেন তখন তাকে বলা হয়েছিল এতে শুধু আপনি ফাঁসবেন না আইসিরি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে দারুণভাবে। তাছাড়া মামলার কথাটাও তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু শ্রীনিবাসন শুনেননি। মঞ্চে কারা কারা উপস্থিত থাকবেন এ তালিকাও নিজে তৈরি করেন।
শ্রীনিবাসনের আচরণ নিয়ে ক্রিকেটে অধিকাংশ দেশই ক্ষুব্ধ। এখন গঠনতন্ত্র ভেঙে পুরস্কার বিতরণ করাতে তারাও নড়েচড়ে বসেছেন। ফাইনালে পুরস্কার বিতরণ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়াও শ্রীনিবাসনের সমালোচনা করেছে।
কলকাতার দৈনিক আনন্দ বাজার উল্লেখ করেছে, ফাইনালের আগের দিন এ নিয়ে কামাল ও শ্রীনিবাসনের তর্ক হয়। কামাল জানতে চান, কি কারণে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে তাকে ট্রফি বিতরণ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এরপরও শ্রীনিবাসন তা কর্ণপাত করেননি।
টেলিগ্রাফ উল্লেখ করেছে, আইন ভেঙে শ্রীনিবাসন ফাইনালের ট্রফি দিয়েছেন। এ জন্য আইসিসির সভাপতি যদি মামলার আশ্রয় নেন, তাহলে নিবাসনের ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, ক্রিকেট খেলুড়ে অনেক দেশই ক্ষুব্ধ। এ জন্য তারা কামালকে সমর্থন দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বাংলাদেশ প্রতিদিন।