১৯৯৮ সালে বিশ্বখ্যাত সানডে টেলিগ্রাফের ১৭ মে সংখ্যায় ‘ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গানস’ শিরোনামে হাইলাইটস হয়েছিলেন বাংলাদেশের এক ধনকুবের। টেলিগ্রাফের ওই সংখ্যাটিতে বাংলাদেশি ধনকুবেরকে নিয়ে লেখা হয়েছিল ব্যতিক্রমী এক প্রচ্ছদ কাহিনী। রিপোর্টটি বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে পশ্চিমা জগতে দারুণ আলোড়ন তোলেন। প্রচ্ছদ কাহিনীতে টেলিগ্রাফের বিশেষ প্রতিনিধি নাইজেল ফার্নডেল লিখেন, “বিশ্বের প্রথম সারির এই অস্ত্র ব্যবসায়ী পৃথিবীর সর্বত্র বিশেষ করে পাশ্চাত্য সমাজে ‘প্রিন্স অব বাংলাদেশ’ বলে খ্যাত। তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তাঁর ও তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি একাই পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ করতে চান! তাঁকে বাংলাদেশের ‘জনশক্তি রপ্তানির জনক’ বলা হয়।”
আলোচিত ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের ৫১ হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে সুইস ব্যাংকে। যিনি চলেন ৪০ জন চৌকস দেহরক্ষী নিয়ে। জীবনযাত্রার প্রতিটি পদে যাঁর রয়েছে বিলাসিতার ছোঁয়া। যিনি পায়ে চড়ান হীরকখচিত কোটি টাকার জুতা। যার ব্যাক্তিগত জেট প্লেনটি একবার ধার দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বব ডোলকে।
সেই ‘প্রিন্স’ মুসার বড় ছেলে ববি হাজ্জাজের নিজের বাড়ি নেই, নগদে বা ব্যাংকে খুব একটা টাকাও নেই। নেই উল্লেখ করার মতো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও!
ববির পেশা শিক্ষকতা। সেখান থেকে তিনি মাসে উপার্জন করেন গড়ে ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে প্রতি মাসে আরো আয় করেন প্রায় ১৭ হাজার ৭৯৮ টাকা। সব মিলিয়ে মাসে তাঁর আয় প্রায় ৫২ হাজার টাকা।
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় এমন তথ্য দিয়েছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র পদপ্রার্থী ববি হাজ্জাজ। গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে এ হলফনামা প্রকাশিত হয়।
হলফনামায় ববি হাজ্জাজ জানিয়েছেন, তাঁর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ রয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৬৯ হাজার ৬২৫ টাকা। আছে ৫ হাজার ৯৮৯ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার লাখ ৬৭ হাজার টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৫০ হাজার টাকার। এ ছাড়া অস্থাবর সম্পদ হিসেবে আছে মোটরগাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, এসি, খাট, সোফা, ডাইনিং টেবিল, আলমারি ইত্যাদি।
হলফনামায় দেওয়া তথ্যমতে, কোথাও কোনো স্থাবর সম্পদ নেই সদ্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ববি হাজ্জাজের। কৃষি বা অকৃষি জমি, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট নেই তাঁর।
এ ছাড়া কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ববি হাজ্জাজ বা তাঁর ওপর নির্ভরশীল কারো কোনো রকমের ঋণ নেই। নেই কোনো দায়-দেনাও।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করলেও কোনো মামলা নেই ববি হাজ্জাজের নামে। পেশা হিসেবে বিলেতের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী ববি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন, ঢাকার বনানীতে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সেইসঙ্গে বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ড্যাটকো প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন বলে শিক্ষাগত যোগ্যতায় জানানো হয়েছে।
স্ত্রীর আছে ১০০ ভরি সোনা
ববি হাজ্জাজের ওপর নির্ভরশীল হিসেবে দেখানো হয়েছে কেবল তাঁর স্ত্রীকে। হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, তাঁর স্ত্রীর কোনো আয়ের উৎস নেই। তবে অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তাঁর কাছে নগদ রয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ববি হাজ্জাজের চাইতেও বেশি অর্থ, যার পরিমাণ দুই লাখ চার হাজার ১০২ টাকা। আর রয়েছে ১০০ ভরি স্বর্ণ। ববি হাজ্জাজের স্ত্রীর একমাত্র স্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়েছে একটি ফ্ল্যাট।
ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের রয়েছে ড্যাটকো নামে একটি জনশক্তি রপ্তানির প্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্বাধীনতার পর তিনিই প্রথম এই ব্যবসা শুরু করেন। এ ছাড়া অস্ত্র ব্যবসা ও তেল কেনাবেচার মধ্যস্থতাও করেন। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ঘড়িগুলোর একটি ব্যবহার করেন, রয়েছে স্বর্ণখচিত ফোন, ৫০০ হীরা খচিত মন্ট বাঙ্ক কলম দিয়ে লেখালেখি করা, বিলাসী জীবনযাপনের জন্য বারবারই আলোচনায় এসেছেন তিনি। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে ৫০ লাখ পাউন্ড লেবার পার্টিকে অনুদান দিতেও চেয়েছিলেন তিনি।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে সাত বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা) আটকে থাকা নিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন মুসা। গত ১৮ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) গিয়ে এসব অর্থ উদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চান। একই দিন তিনি এসব অর্থ উদ্ধার করা হলে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা ও মানুষের কল্যাণ ও পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় করা হবে বলে ঘোষণা দেন।