খালেদা জিয়ার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ব্যাপারে আদালত থেকে রায় এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম আজ বুধবার জাতীয় সংসদে জানতে চান, ‘চলমান আন্দোলনের সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিএনপির চেয়ারপারসনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে কিনা?’, জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যদি কোর্ট থেকে রায় আসে, বা নির্দেশ আসে যে তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জনগণের মাঝে বিলিয়ে দিতে, তাহলে অবশ্যই আমরা তা-ই করব। এখানে আইনের বাইরে আমরা কিছু করতে পারব না। কারণ তিনি আইন ভঙ্গ করছেন বলে তো আমরা আইন ভঙ্গ করতে পারি না।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, বিএনপির চলমান আন্দোলনে ৮৫ দিনে সারা দেশে ১৩০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, দুই হাজারেরও বেশি যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ আর বেগম জিয়ার সাথে নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর এই কর্মসূচি বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। আর এটাই হবে তাঁর কথিত আন্দোলনের যৌক্তিক পরিণতি।’ তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে আহ্বান জানান, ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালু রাখুন। স্বাভাবিক যান চলাচল অব্যাহত রাখুন। অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’
প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি সরকার জানমালের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে।
‘স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন জরুরি’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি মনে করি, প্রতিটি স্তরে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়া এবং এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে আইন সংশোধন করা উচিত বলে আমি মনে করি।’
চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় সরকার আইনে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কিন্তু যখন হিসাব করা হয়, তখন দলের নাম হিসাব করা হয়। হিসাবের সময় পত্রপত্রিকা দলের হিসাবে চলে আসে। তিনি আরো বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধি কী কাজ করছেন, দলের নিয়ন্ত্রণে থাকলে তাঁরা সঠিক কাজ করছেন কি না, সে ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিয়ন্ত্রণের সুযোগ থাকে।’
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘ইংল্যান্ডে যান, আমেরিকায় যান বা আমাদের প্রতিবেশী ভারতে যান বা পৃথিবীর যে কোনো দেশেই, যান প্রতিটি দেশেই কিন্তু স্থানীয় সরকার দলীয়ভাবেই করা হয় (তখন সংসদের উপস্থিত সদস্যরা টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানান)।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ইংল্যান্ডের কাউন্সিলর থেকে শুরু করে প্রতিটি নির্বাচন দলীয় মনোনয়নের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কাজেই সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি আমাদের আইনগুলো সংশোধন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পূর্ণ দলীয় ব্যানারে যাতে হয় এবং মনোনয়নদানে যেন সুযোগ থাকে, সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’
‘নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করবে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ বিষয়ে বলেছেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং সরকার এ ক্ষেত্রে সব রকম সহযোগিতা করবে।’
দশম জাতীয় সংসদে পঞ্চম অধিবেশনে ময়মনসিংহ -৮ আসনের সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেছেন, ‘দলনিরপেক্ষ অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্যানেল তৈরি করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন যাতে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু হতে পারে সে লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ঠিক যেভাবে নির্দেশ করবে, ঠিক সেভাবেই পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করবে। যেহেতু প্রশাসনিক কর্মকর্তা, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত। কাজেই নির্বাচন কমিশন যেভাবে চাইবে, সেভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী ২৮ এপ্রিল এ তিন সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন ওই নির্বাচন নিরপেক্ষ, সুষ্ঠুভাবে করার সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। হালনাগাদকৃত ভোটার তালিকা এলাকাভিত্তিক বিন্যাস করে সিডি প্রস্তুত করা হয়েছে। অর্থাৎ সফট কপি করা হয়েছে, আবার ছাপা কপিও থাকবে।’
নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কর্মকর্তাদের দ্বারা সরেজমিন পরিদর্শনসহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্র নির্বাচন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে।’ তিনি আরো বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে যেন ভোটার ও প্রার্থীগণ যেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন তার জন্য সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষ জনবল নিয়োজিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, গত ছয় বছরে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকার ঢাকা মহানগরবাসীকে উন্নত নাগরিকসেবা প্রদানের জন্য ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভাগ করেছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহকে সিটি করপোরেশন করার বিবেচনা সরকারের আছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।