বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন অটিস্টিক ছিলেন। সুরস্রষ্টা বিটোফেন, মোজার্টও প্রতিবন্ধী ছিলেন। তাঁদের ভেতর সুপ্ত ট্যালেন্ট (মেধা) বিকশিত হয়েছে। তাই আমাদের দেশের প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক শিশুদেরও ট্যালেন্ট বিকাশের সুযোগ দিতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, অটিস্টিক শিশুদের যেকোনো একটা বিষয়ে সাংঘাতিক দক্ষতা থাকে। একবার বিকশিত হতে দেখা দিলেই তাঁদের কাছ থেকে সমাজ অনেক কিছু শিখতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, অটিজম কোনো রোগ নয়। এখন মানুষ সচেতন হয়েছে। তিনি বলেন, আগে সমাজে অটিজম সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। অটিস্টিক শিশুদের স্কুলে যাওয়া বা আত্মীয়্স্বজনের সামনে নেওয়া যেত না। শিশুটির মাকে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে এ ধারণার পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের বিষয়ে কারো কোন হাত নেই। কিন্তু আমাদের সমাজে অটিজম নিয়ে কিছু নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। আমাদের এ ধরণের নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অটিজম বিষয়ে সায়মার কাছ থেকে জেনেছি
অটিজম নিয়ে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের তৎপরতা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সায়মা ওয়াজেদ অটিজম নিয়ে কাজ করছে। আমি নিজেও এ ব্যাপারে সচেতন ছিলাম না। আমার মেয়ের কাছ থেকে জেনেছি। সে চাকরি করত, তার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। অনেক সময় তার সাথে গিয়ে এ বিষয়ে অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে সব সময় তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছি। গতকাল সে নিউইয়র্কে সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছে। অটিজম সচেতনতায় অবদান রাখায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে তাকে পদক দেওয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে অটিজম বিষয়ে দুটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। এটা বাংলাদেশ উত্থাপন করেছে।
অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল অটিজম এডভায়জরি কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।
মোবাইলের মাধ্যমে থেরাপি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের সুবিধার্থে সরকার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে থেরাপি সার্ভিসের ব্যবস্থা করবে। অভিভাবকরা অটিস্টিক শিশুদের বিভিন্ন সেন্টারে নিয়ে গিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে থেরাপি সেবা পাবেন। অনলাইনে ই-কাউন্সেলিং কার্যক্রমও শুরু হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ছয়টি বিভাগীয় শহরে প্রতিবন্ধী সেবা চালু হয়েছে। একটি করে স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন ইন অটিজম চালু করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ আইন পাস করেছে। একটি ফাউন্ডেশনও গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অটিজমের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বাবা-মা না থাকলে কে এই শিশুদের দেখবে? এদের কথা চিন্তা করে ট্রাস্ট-ফান্ড-ফাউন্ডেশন করেছি। শিক্ষার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫০টি বিদ্যালয়ে প্রায় ১০ হাজার অটিস্টিক শিশু লেখাপড়া করছে। তাদের জন্য নয় কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সাধারণ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যেন মিশতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিবিড় শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রত্যেক প্রতিবন্ধীকে একটি ভাতা দেওয়া হচ্ছে। উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৬৪ জেলায় ১০৩ ওসিসি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধীদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে দেশের ৬৪টি জেলায় ১০৩টি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) করা হয়েছে। অটিজম কর্নার চালু হয়েছে। এখন থেকে যেকোনো সমস্যা সমাধানে শিশুদের রাজধানীতে আনা লাগবে না।
আজকের আয়োজন
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট প্রমোদ মানকিন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোজাম্মেল হোসেন এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম বক্তব্য রাখেন।