প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর পায়রায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী রোববার তাঁর হোটেল স্যুটে দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ডের (ডিপি ওয়ার্ল্ড) চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলাইয়েমের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকে পায়রাতে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর, মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ এবং একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ডকে (ডিপি ওয়ার্ল্ড) আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তার এ প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেন ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান।
শেখ হাসিনার সঙ্গে সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েমের বৈঠকের পর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডিপি ওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন দেশে পোর্ট নির্মাণের অভিজ্ঞতা আছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় তাদের অভিজ্ঞতা আছে। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সমুদ্রবন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড বর্তমানে ছয় মহাদেশজুড়ে ৬০টির বেশি সমুদ্রবন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া ১০টি দেশে তাদের কার্যক্রম আরো বিস্তৃত ও নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। লন্ডন গেটওয়ে পোর্ট নির্মাণের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাদের।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ডিপি ওয়ার্ল্ডের প্রধান কার্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির কর্মী সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বৈঠকে পায়রাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে একটাই কারণে। সম্প্রতি পায়রাতে সমুদ্রবন্দর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একই সাথে ওখানে একটা নেভাল বেইস হবে। একটা বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ওখানে যে গভীরতা আছে, নদীতে ও সাগরের মোহনায় যে গভীরতা আছে- ওই গভীরতার কারণে ওখানে সমুদ্রবন্দর স্থাপনা প্রাথমিকভাবে মনে হয় খুবই ফিজিবল হবে।’
এছাড়া আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে পায়রার গুরুত্ব তুলে ধরে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নেপাল-ভুটানের সঙ্গে আমাদের যে ট্রানজিট এবং পদ্মা সেতু দিয়ে আমরা পূর্বদিকের সাথে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের যোগাযোগ স্থাপন করতে পারব। সে বিবেচনায় পায়রাতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে কথা বলেছেন।’
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘পায়রা বন্দর ইতোমধ্যে চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলাইয়েম এখানে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী টেকনাফ থেকে মিরেরসরাই পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার মেরিটাইম ড্রাইভওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ডিপি ওয়ার্ল্ড চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানান।’
শহিদুল হক আরও বলেন, ‘বৈঠকে বাংলাদেশে বিশেষ করে অবকাঠামোর উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পে ডিপি ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষের বিনিয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তির পর সমৃদ্ধ এই সমুদ্র এলাকায় ব্যাপক সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন বলে জানান তিনি।
‘ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান বলেছেন, তারা যেখানেই এ ধরনের পোর্ট ফেসিলিটিজের কাজ করেন সেখানেই এর পাশাপাশি একটা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেন বিনিয়োগের জন্য। বন্দরকে সচল রাখার জন্য,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ডিপি ওয়ার্ল্ডের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন বলেও জানান শহীদুল হক।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের কথাও হয়েছে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, গভীর সমুদ্র বন্দর, মেরিন ড্রাইভ এবং বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ডিপি ওয়ার্ল্ড ‘পজিটিভ রেসপন্স’ করেছে।
‘উনারা বলেছেন, উনাদের টিম অতি দ্রুত যাবে এবং তারা খুবই আগ্রহী।’
এদিকে, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া আরো সহজ করতে আগামী বছরের শুরুতে ঢাকা দূতাবাসে একজন লেবার অ্যাটাশে নিয়োগ দেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত।সংযুক্ত আরব আমিরাত সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এ উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। আগামী বছরের শুরুতেই ঢাকায় তার দেশের দূতাবাসে একজন লেবার অ্যাটাশে নিয়োগের বিষয়টি তাদের বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
পরে শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার এক পর্যায়ে আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, আগামী বছরের শুরুর দিকে আমিরাতের দূতাবাসে একজন লেবার অ্যাটাশেকে পাঠানোর চিন্তা ভাবনা করছেন তারা।’
তাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একটা ভালো উদ্যোগ। ইতিবাচক অগ্রগতি। আমরা কাজ করছি। সফর শেষে একটা যৌথ ইশতেহারের ব্যাপারে আলোচনা চলছে।’
সফরের শেষ দিন এই যৌথ ইশতেহার চূড়ান্ত হওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
অত্যন্ত সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশের সরকার প্রধানের সাক্ষাত হয় বলে জানান মাহমুদ আলী। সাক্ষাতে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়েও তাদের আলোচনা হয় বলে জানান মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সঙ্গেও বৈঠক করেন বলে জানান মাহমুদ আলী।
তিন দিনের সফরে শনিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।